টক দই দেখে কি নাক সিটকান? তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ ...!

ওই যে কথায় বলে না "ঘার কা মুরগি ডাল বরাবার", দইয়ের ক্ষেত্রেও কিন্তু এই আপ্তবাক্যটি দারুনভাবে খেটে যায়। কারণ শত শত উপকারি উপাদানে ঠাসা একটি খাবারের দাম মাত্র গুটি কয়েক টাকা, চাইলে একটা পয়সা খরচ না করে বাড়িতেই তৈরি করে ফেলা যায়। তবু যুব সমাজের সিংহভাগই দই খেতে প্রস্তুত নন। বরং পকেট হালকা করে ফাস্ট ফুড সেন্টারের ব্যবসা বাড়াতে এরা এক পায়ে খাড়া। কিন্তু বন্ধু এই সব ভাজাভুজি খেতে খেতে যখন শরীরটা ঝাঁজরা হয়ে যবে, তখন দেহ বাবাজিকে সুস্থ রাখতে কিন্তু সেই দইয়েরই প্রয়োজন পরবে। কেন জানেন? আসলে বন্ধু বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গত দশ বছরে যে যে মারণ রোগ বেশি মাত্রায় থাবা বসিয়েছে যুব সমাজের উপরে, এই যেমন ধরুন-ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগের প্রকোপ কমাতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, রোজের ডায়েটে একবাটি দইকে জায়গা করে দিলে আরও নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...

১. ভেজাইনাল ইনফেকশের মতো রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস নামক একটি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে ভেজাইনাল ইনফেকশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। এই কারণেই তো মহিলাদের নিয়মিত দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

২. মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ঘাটতি দূর হয়: দইয়ে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো উপকারি উপাদান। তাই তো নিয়মিত একবাটি করে দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে নানাবিধ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। ফলে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৩. স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব মারণ রোগগুলির কারণে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনয়ীতা যে বেড়েছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।

৪. পুষ্টিকর উপাদানের চাহিদা মেটে: নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আয়োডিনের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি৫ এবং বি১২-এর মাত্রাও বাড়তে থাকে। আর এই সবকটি উপাদানই যে নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, তা কি আর বলে দিতে হবে! এই যেমন ধরুন ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বা এল ডি এল-এর মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। তাই তো নিয়মিত এই দুগ্ধজাত খাবারটি খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো পরিবারে যদি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ইতিহাস থাকলে দইকে সঙ্গ ছাড়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!

৬. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: দইয়ে পরিমাণ মতো বেসন এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। আসলে দইয়ে থাকা জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে কম করে ২-৩ বার লাগালে দারুন উপকার মেলে।

৭. ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস থ্রেমোফিলাস নামক দুটি ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলের জন্ম আটকে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

৮. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ি এইচ পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফলতেও দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় দইয়ের অন্তর্ভুক্তির পিছনে সাওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

৯. দুধের বিকল্প হিসেবে চলতেই পারে: এমন অনেকই আছেন যারা একেবারে দুধ খেতে পারেন না। কারও গন্ধ লাগে, তো কারও বমি পাই। এই ধরনের সমস্যাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলা হয়। প্রসঙ্গত, দুধ থেকে দই হওয়ার সময় ল্যাকটোজ, ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে দই খেলে না গা গোলায়, না বমি পায়।

১০. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: অতিরিক্তি ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত এক বাটি করে দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। বিশেষত ভুঁড়ি কমাতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকদের করা একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

১১. হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: দুধের মতো দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বুড়ে বয়সে গিয়ে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগ আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে।

১২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে সংক্রমণ থেকে ভাইরাল ফিবার, কোনও কিছুই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।

Random Post