স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মার থেকে বাঁচতে খেতেই হবে এই খাবারগুলি!


একাধিক পরিসংখ্যান ঘেঁটে যে চিত্র সামনে এসেছে, তা বেজায় ভয়ঙ্কর। গত এক দশকে আমাদের দেশের কম বয়সিদের মধ্যে ডিপ্রেশন জনিত মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আর আগামী ২-৩ বছরে এই সংখ্যাটা যে আকাশ ছোঁবে, তা ইউনাইটেড নেশানের একটি রিপোর্ট দেখেই প্রমাণ হয়েছে যায়। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে সারা বিশ্বের মধ্যে চিনের পর ভারতই এমন দেশে যেখানে মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যাটা সবথেকে বেশি। শুধু তাই নয়, আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ২৫-৪০ এর মধ্যে। তাই এখন থেকেই যদি সাবধান না হওয়া যায়, তাহলে যে আমাদের দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না, তা বলাই বাহুল্য! মানসিক অবসাদ আসলে কী? বিজ্ঞানের যা যুক্তি, তা অনুসারে দিনের পর দিন মন খারাপ থাকতে থাকতে তা ক্রমিক আকার ধারণ করে। আর এমনটা হওয়া মাত্র জাগতিক সব কিছু থেকে কেমন যেন মন উঠতে শুরু করে। কোনও কিছুই যেন ভাল লাগে না। মনে হয় জীবনটা যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিকেই চিকিৎসা পরিভাষায় ডিপ্রেশন বল হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি গবেষণায় ডিপ্রেশনের সঙ্গে মস্তিষ্কের ভোল বদলের কি সম্পর্ক, সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা হয়েছে। জার্নাল বায়োলজিকাল সাইকিয়াট্রি: কগনিটিভনিউরোসায়েন্স অ্যান্ড নিউরোইমেজিং-এ প্রকাশিত এই গবেষণা পত্রে উল্লেখ রয়েছে যে ব্রেনের বিভিন্ন অংশের অ্যাকটিভিটিতে কেমন পরিবর্তন আসছে তার উপর নির্ভর করে মনের অবস্থা। যেমন ধরুন ব্রেনের যে অংশে স্মৃতিশক্তি মজুত থাকে সেই অংশটি মাত্রাতিরিক্ত অ্যাকটিভ হওয়ার সময় যদি ব্রেনে স্ট্রেস হরমোনের রিলিজ বেড়ে যায়, তাহলে পুরনো কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এখন প্রশ্ন হল মন খারাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় কিভাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের চারিপাশে বেশ কিছু প্রকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা মানসিক অবসাদকে নিমেষে বাগে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হে যুবসমাজ নিজেদের ভবিষ্যতকে চাপ মুক্ত করতে দয়া করে এই প্রবন্ধে আলোচিক প্রকৃতিক উপাদনগুলি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। মানসিক অবসাদকে বাগে আনতে যে যে উপাদানগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...

১. জাম: সুস্বাদু এই ফলটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানসিক অবসাদ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, জার্নাল অব নিউট্রিশনাল অ্যান্ড এনভারোমেন্টাল মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল এমন একটি উপাদান, যা ব্রেন হেল্থের উন্নতিতে নানাভাবে সাহায্য় করে থাকে। এই কারণেই তো ডিপ্রেশনের মতো রোগের চিকিৎসায় এই উপাদানটিকে কাজে লাগানোর পক্ষে সাওয়াল করে থাকেন সাইকিয়াট্রিস্টের।

২. সবুজ শাক-সবজি: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রোজের ডায়েটে সবুজ-শাক-সবজিকে জয়গা করে দিলে ব্রেনের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, সবজিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩. শতমূলী: মানসিক অবসাদের কারণে কি জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে? তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত অল্প করে শতমূলী গাছের মূল থেকে বানানো পাউডার খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন এমনটা করলে দারুন উপকার মিলবে। আসলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টমকে শান্ত করার মধ্যে দিয়ে মনকে চাঙ্গা করে তুলতে এই প্রকৃতিক উপাদনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. ব্রাহ্মি শাখ: স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি য়ে কতটা সাহায্য করে থাকে, তা তো সবাই জানা। কিন্তু মানসিক অবসাদ কমাতেও যে ব্রাহ্মি নিজের খেল দেখায়, সে কথা কি জানা ছিল বন্ধুরা? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই শাকটি খাওয়া মাত্র মস্তিষ্কের অন্দরে সেরাটোনিন লেভেল বাড়তে শুরু করে। ফলে মন এতটাই চনমনে হয়ে ওঠে যে মানসিক অবসাদ দূরে পালাতে সময়ই লাগে না।

৫. আখরোট: মন খারাপ এতটা মাত্রা ছাড়িয়েছে যে কিছুই ভাল লাগছে না? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই অল্প করে আখরোট খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময়ই লাগবে না। আসলে এই বাদামটির অন্দরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একদিকে যেমন ব্রেন ফাংশন বাড়াতে সাহায্য করে, তেমনি ডিপ্রেশনের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. গ্রিন টি: শরীরকে রোগ মুক্ত রাখার পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে এবং মানসিক অবসাদকে বাগে আনতে গ্রিন টি-এর কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। আসলে এই পানীয়টিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাকারি উপাদান শরীর থেকে সব টক্সিক উপাদানদের বের করে ব্রেনকে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে মানসিক অবসাদ কমতে সময় লাগে না।

৭. অশ্বগন্ধা: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধায় উপস্থিত স্টেরোয়ডাল ল্যাকটোনস, অ্যালকালয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অংজাইটি প্রপাটিজ শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তাই তো এবার থেকে মন খারাপ ঘারে চেপে বসলেই অল্প করে অশ্বগন্ধা পাউডার জলে গুলে খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন মন চাঙ্গা উঠতে সময় লাগবে না।

৮. পুদিনা পাতা: পুরানো দিনের আয়ুর্বেদিক পুঁথি ঘাঁটলেই জানতে পারবেন নার্ভাস সিস্টেম সম্পর্কিত নানা রোগের চিকিৎসায় কিভাবে ব্যবহার করা হত পুদিনা পাতাকে। আসলে এই পাতাটির অন্দের থাকা মেন্থল নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, সি, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার এবং পটাশিয়াম মানসিক অবসাদ কমানোর পাশাপাশি ইনসমনিয়ার মতো রোগ সারাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Random Post