ঘামের প্রকোপ কমাতে কাজে লাগাতে পারেন এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে!


এই গরমে ঘামের চোটে জীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তখন এই প্রবন্ধ আপনাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে। কেন জানেন?

এই লেখায় এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যাদেরকে কাজে লাগালে ঘামের মাত্রা তো কমবেই, সেই সঙ্গে অতিরিক্তি ঘামের কারণে শরীরের ইতিউতি জন্ম নেওয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারাও মারা পরবে। তবে একটা কথা জেনে রাখা ভাল যে ঘাম কিন্তু শরীরের পক্ষে খুব ভাল। কারণ শরীরে জমে থাকা নানা ক্ষতিকর টক্সিন বা বিষ ঘামের মাধ্যমেই দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত গরমের সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও ঘাম সাহায্য করে থাকে। আসলে ঘামের মাধ্যমেই শরীরের অন্দরের তাপ বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই তো "সোয়েটিং"কে এক কথায় শরীরের নিজস্ব কুলিং সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু একথাও ঠিক যে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়াটা মোটেও ভাল নয়। এমনটা হলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না ঠিকই, কিন্তু লোকসমাজে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পরে যাওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।

ঘাম হওয়াটা তো আমাদের হাতে নেই। তাহলে? কে বলল নেই! এই প্রবন্ধে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা ঘামের প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে। তাই তো বলি অতিরিক্ত ঘামের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে সময় নষ্ট না করে এক্ষুনি পড়ে ফেলুন এই প্রবন্ধটি। প্রসঙ্গত, সেইসব ঘরোটা পদ্ধতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, সেগুলি হল...
 
১. গোলাপ জল:

একটা বাটিতে অল্প পরিমাণ গোলাপ জল নিয়ে তুলোর সাহায্যে বগল, হাতের তালু, পায়ের পাতা এবং শরীরের সেই সব জায়গায় লাগান, যেখানে বেশি মাত্রায় ঘাম হয়ে থাকে। এমনটা করলে দেখবেন ঘামের মাত্রা কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা মারা যাওয়ার কারণে গায়ের দুর্গন্ধও দূর হয়।
 
২.কর্নফ্লাওয়ার:

আপনি কি ঘুম ঘামেন? তাহলে আজ থেকেই পাউডারের জায়গায় সারা শরীরে অল্প করে কর্নফ্লাওয়ার লাগাতে শুরু করুন। শুনতে আজব লাগলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি কিন্তু ঘাম কমাতে দারুন কাজে আসে।
 
৩. লেবু:

শরীরের যে যে জায়গায় বেশি মাত্রায় ঘাম হয়, সেখানে সেখানে অল্প করে লেবুর রস লাগান অথবা লেবু ঘযে দিন, তাহলেই দেখবেন আর ঘম হবে না। কারণ লেবুতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা প্রকৃতিক ডিয়োডরেন্টের কাজ করে। সেই সঙ্গে ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে গায়ের গন্ধ দূর হয়।
 
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার:

এই ধরনের ভিনিগারে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট নামে একটি উপাদান থাকে, যা ঘামের প্রকোপ কমানোর পাশপাশি শরীরে পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য যত ঠিক থাকবে, তত শরীরে বদ গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের প্রকোপ কমবে। ফলে ঘামের সঙ্গে সঙ্গে তার গন্ধও হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে স্নানের জলে অল্প করে অ্যাপেল সিডাক ভিনাগার মিশিয়ে সেই জল দিয়ে স্নান করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
 
৫. লাল চা:

একেবারে ঠিক শুনেছেন এই ধরনের সমস্যা কমাতে লাল চা দারুন উপকারে লাগে। আসলে লাল চায়ে অ্যাস্ট্রিজেন্ট এবং অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট প্রপাটিজ রয়েছে, যা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক কাপ জলে একটা টি-ব্যাগ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে সেই জল শরীরে যেখানে যাখানে বেশি ঘাম হয় সেখানে লাগান। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
 
৬. নারকেল তেল:

ঘাম কমাতে নারকেল তেল কীভাবে কাজে আসে? আসলে এতে রয়েছে লরিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। শুধু তাই নয়, ঘামের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, গরমের সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে আমরা অনেকেই খুব ক্লান্ত হয়ে পরি। এই ক্লান্তি দূর করতেও নারকেল তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৭. চন্দন:

অল্প পরিমাণ চন্দন গুঁড়োর সঙ্গে সমপরিমাণে জল,লেবুর রস অথবা গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই মিশ্রনটা রাতে শুতে যাওয়ার আগে শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। এমনটা করলে শরীর ভিতর এবং বাইরে থেকে ঠান্ডা হবে। ফলে ঘামের মাত্রা কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে চন্দনের সুন্দর গন্ধের নিচে চাপা পরে যাবে ঘামের বদগন্ধ।
 
৮. আলু:

কে বলে আলুকে কাজে লাগিয়ে শুধু ভাল বাঙালি পদ রান্না করা যায়! এই সবজিটি আরও নানা কাজে লাগে। যেমন ধরুন অতিরিক্ত ঘাম কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে আলু। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান নানাভাবে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তাই আপনিও যদি এমন সমস্যার শিকার হন, তাহলে আজই একটা আলু দু টুকরো করে শরীরের যে যে জায়গায় ঘাম বেশি হয়, সেখানে কিছুক্ষণ ঘষে দিন। দেখবেন ঘাম হওয়া কমে যাবে।
 
৯. নুন:

ঘামের প্রকোপ কমাতে নুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো ননু, লেবু জলে মিশিয়ে শরীরের যেখানে যেখানে বেশি ঘাম হয়, সেখানে সেখানে লাগান। তাহলেই দেখবেন সমস্যা কমে যাবে।
 
১০. খাবার সোডা:

এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় উপরকারি অ্যাসিড, যা ঘামের দয়ায় বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেল। ফলে গায়ের গন্ধ দূর হয়। শুধু তাই নয়, ঘামের প্রকোপ কমাতেও এই ঘরোয়া উপদানটি দারুন কাজে লাগে।
 
১১. টমাটো জুস:

কার কী পরিমাণ ঘাম হবে, তা কিন্তু অনেকাংশেই ডায়েটের উপর নির্ভর করে। তাই তো কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন সেদিকে নজর দেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের ডায়াটে এক গ্লাস করে টমাটোর রসের অন্তর্ভুক্তি একান্ত জরুরি। কারণ এটি অতিরিক্ত ঘাম হওয়া যেমন কমায়, তেমনি গায়ের দুর্গন্ধও দূর করে। প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি এবং ফল খেলে ঘাম হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।

Random Post