তামার পাত্রে রাখা জল পান জরুরি কেন?

ভগবান আর অসুরে তুমুল দড়ি টানাটানি চলছে। এ লড়াই অমৃত দখলের লড়াই। যে পাবে সেই হবে অমর। টিভিতে এই সিনটা দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই মনে এক আজব প্রশ্ন জাগল। আচ্ছা, এ যুগে কী কোনও ভাবেই মিলতে পারে না ওমন অমৃতের সন্ধান? কলি যুগে অসুরদের দেখা মেলে না। যদিও ভগবানের সন্ধানও যে খুব সহজে পাওয়া যায়, এমনও নয়। তাই হঠাৎ একদিন গঙ্গাবক্ষে ভগবান-অসুরে লড়াই দেখার সুযোগ এ যুগে নেই। কিন্তু তবুও মিলতে পারে অমৃতের সন্ধান। কীভাবে? কোনও সমস্যা নেই, আজই বাজার থেকে একটা তামার গ্লাস কিনে আনুন। আর কাল থেকেই তাতে জল খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন হাজারো রোগ এক নিমেষে সেরে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে আয়ুও। তাহলে বন্ধুরা...কি মিলল তো অমৃতের খোঁজ! জলের মধ্যে থাকা লক্ষাধিক মাইক্রোঅর্গেনিজম, মোল্ড, ফাঙ্গাস এবং ব্য়াকটেরিয়াদের মেরে ফেলতে তামার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে তামার একাধিক গুণাগুণ জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার ফলে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, তামায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা একদিকে যেমন ক্যান্সার বিরোধী, তেমনি অন্যদিকে শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দিতেও সাহায্য করে। তাই তো প্রতিদিন কম করে ২-৩ গ্লাস জল তামার গ্লাসে রেখে পান করা চাইই-চাই। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে তামার গ্লাসে রাখা জল পান করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে কোনও রোগের টিকি পর্যন্তও দেখা যায় না। এখানেই কিন্তু শেষ নয়। তামার গ্লাসে জল খেলে আরও উপকার পাওয়া যায়। যেমন...

১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: তামা, ত্বকের অন্দরে মেলানিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটার পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে মুখ মন্ডল বেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

২. ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল ক্যান্সার বিরোধী। তাই শরীরে যত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়তে থাকবে, তত দূরে পালাবে কর্কট রোগ। কিন্তু শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়বে কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন তামার গ্লাসে জল খেলেই কেল্লাফতে! কারণ তামায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা জলের সঙ্গে মিশে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে কোষেদের বিভাজন যাতে ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে দেহের অন্দরে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন হয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

৩. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: তামার এমন কিছু গুণ রয়েছে যা চোখের পলকে পাকস্থলীতে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে আলসার, বদহজম এবং স্টমাক ইনফেকশনের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এখানেই শেষ নয়, স্টমাকে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিনদের বের করে দেওয়ার পাশাপাশি লিভার এবং কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতেও দারুন কাজে আসে তামা। তাই তো প্রতিদিন তামার গ্লাস খাওয়ার পরামর্শ দেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা।

৪. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়: দেহের অন্দরে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি মেটানো থেকে শুরু করে কোষের গঠন, প্রায় সব কাজেই তামার প্রয়োজন পরে। এই কারণেই তো অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের তামার পাত্রে জল রেখে খেতে বলা হয়। এমনটা করলে দ্রুত রক্তাল্পতা দূর হয় এবং সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৫. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির করা এক গবেষণা অনুসারে কপার বা তামা হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো মারণ রোগকে একেবারে ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ফলে আয়ু তো বাড়েই, সেই সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও সুন্দর হয়ে ওঠে।

৬. আর্থ্রাইটিসের কষ্ট কমায়: এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই জয়েন্ট পেন হয়ে উঠবে রোজের সঙ্গী। ফলে স্বাভাবিক হাঁটা-চলার উপর একেবারে ফুল স্টপ পরে যাবে। কিন্তু তামাকে সঙ্গে রাখলে দেখবেন আর এমন কষ্ট পেতে হবে না। কীভাবে? তামায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ, যা আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা শুধু নয়, শরীরের যে কোনও প্রদাহ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, তামায় এমন কিছু উপাদান আছে যা হাড়ের গঠন মজবুত করতে দারুন কাজে আসে। তাই ৪০-এর পর থেকে মহিলাদের নিয়ম করে তামার জল খাওয়া উচিত। কারণ নানা কারণে বেশিরভাগ মহিলাদের শরীরেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে। ফলে এক সময় গিয়ে আর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

৭.ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: তামার গ্লাসে জল খাওয়ার অভ্যাস করলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও ঝড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেদ কমতে থাকে।

৮. শরীর এবং ত্বকের বয়স কমতে থাকে: এবার বুঝতে পরেছেন তো কেন তামার গ্লাসের জলকে অমৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিলে বলিরেখা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে টক্সিক উপাদানেরাও শরীরের আর কোনও ক্ষতি করতে পারে না। ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও ত্বক এবং দেহের উপর এর কোনও চাপ পারে না।

৯. ক্ষত সেরে যায় ঝটপট: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ থাকার কারণে শরীরে তামার পরিমাণ যত বাড়তে থাকে, তত দ্রত ক্ষতও সারতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে একাধিক সংক্রমণের প্রকোপ একেবারে কমে যায়।

১০.সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে: তামার পাত্রে জলে রাখলে তাতে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা সব মারা পরে। বিশেষত ই.কোলাই এবং এস.অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে তামা বিশেষভাবে সাহায্য় করে থাকে। এই কারণেই তো নিয়মিত তামার পাত্রে রাখা জল পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

Random Post