নিয়মিত এক গ্লাস করে বিটের রস খেলে শরীরের কী কী উপকার হয় জানেন?


বিট রসের অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং এ। সেই সঙ্গে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এই কারণেই তো এই বিটরুটকে সুপার ফুড হিসেবে গণ্য করেছেন চিকিৎসক মহল। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বিটের রস অথবা বিটরুট খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে উপকারি খনিজের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে, যার প্রভাবে একাধিক রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...

১. লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, বিটেইন, ভিটামিন বি, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এই সবজিটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। কারণ সবকটি উপাদানই নানাভাবে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, লিভারের অন্দরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানেরা যাতে ঠিক মতো বেরিয়ে যেতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে বিটের অন্দরে থাকা বিটেইন এবং ফাইবার।

২. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বিটের শরীরে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।

৩. শরীর থেকে টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়: বিটের অন্দরে রয়েছে বিটালায়েন্স নামে একটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বার করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখানেই শেষ নয়, বিটের রসে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: যেভাবে স্ট্রেস আমাদের ঘিরে ধরছে, তাতে রক্তের আর কী দোষ বলুন! রাগে-দুঃখে-হতাশায় সে ফুলে ফেঁপে উঠছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে রক্তচাপ। এমন অবস্থায় রক্তকে ঠান্ডা করতে পারে একমাত্র বিটের রক্তিম রস। আসলে রক্তের মতোই দেখতে এই রসটিতে রয়েছে নাইট্রেস, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. হার্টের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বিটরুট বা বিটের রস খেলে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হৃদপিন্ডের অন্দরে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবানও কমে। এই কারণেই তো যাদের পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের ৩০-এর পর থেকেই নিয়মিত বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৬. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: রক্তে উপস্থিত নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদান এবং টক্সিক উপাদানদের শরীরে থেকে বার করে দিয়ে ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তুলতে বিটের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো মুখের ক্যানভাসে যদি কালো ছোপ বা ব্রণর দাপাদাপি থাকে, তাহল আজই বিটের রসের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান। দখবেন এই বন্ধু আপনার দারুন উপকারে লাগবে।

৭. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়: গলা দিয়ে গড়িয়ে রসটা যখনই রক্তে মেশে অমনি সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে দেহের প্রতিটি অংশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ঘাটতি হতে থাকা ফিজিকাল এনার্জিও ফিরে আসে। শুধু তাই নয়, স্ট্রেসও কমতে থাকে। তাই এবার থেকে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত-অবশান্ত লাগলে ঝপ করে এক গ্লাস বিটের রস বানিয়ে খেয়ে ফেলবেন। দেখবেন নিমেষে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।

৮. ব্রেণ পাওয়ার বাড়ে: মস্তিষ্কের সোমাটোমটোর কটেক্স অঞ্চলে অক্সিজেনেশানের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে ব্রেন নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়াতে বিটের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর একবার মস্তিষ্কের এই বিশেষ অংশটির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির বিকাশ ঘঠতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, বিটের অন্দরে থাকা নাইট্রেট শরীরে প্রবেশ করে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা ব্রেণের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯.হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বাড়ির বাইরে খেতে খেতে পাকস্থলি কাজ করা বন্ধ করে দিতে বসেছে। ফলে বাড়ছে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ? ফিকার নট! কাল থেকে এক গ্লাস করে বিট রুটের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন স্টমাক তার হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা ফিরে পাবে। ফলে হজম ক্ষমতা এমন বেড়ে যাবে যে অম্বল ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।

Random Post