ভুলেও বেশি মাত্রায় নুন খাবেন না যেন! না হলে কিন্তু...!

নুনের বিষয়ে সাবধান হাওয়ার সময় মনে হয় এসে গিয়েছে বন্ধুরা। কারণ গতকাল একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে, আর তাতে যা উঠে এসেছে তা বেজায় ভয়ঙ্কর! কী এমন লেখা রয়েছে সেই গবেষণা পত্রে? মার্কিন গবেষকদের করা এই পরীক্ষায় দেখা গেছে নুন খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকলে ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, ডিমেনশিয়ার মতো ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আসলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ কমতে শুরু করে। যে কারণে ধীরে ধীরে ব্রেন পাওয়ার কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের আরও নানা ধরবনের ক্ষতি হয়। কারণ বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে নুনের সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের ভাল-মন্দের যোগ রয়েছে, যেমনটা রয়েছে মস্তিষ্কের সঙ্গে। এই কারণেই তো কি পরিমাণে কাঁচা নুন খাচ্ছেন, শুধু তা নয়, খাবারে কী পরিমাণ নুন দিচ্ছেন, তার উপরও শরীর কতটা রোগমুক্ত থাকবে, তা নির্ভর করে থাকে। প্রসঙ্গত, শরীরে নুনের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে ভাইটাল অর্গ্যানেরা ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে একাধিক রোগ ঘারে চেপে বসে, যার মধ্য়ে বেশ কতগুলি মারণ রোগও। যেমন ধরুন...

১. রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে: একথা আজ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে নুন খাওয়ার পরিমাণে যদি নিয়ন্ত্রণ আনা না যায়, তাহলে বাল্ড প্রেসার মারাত্মক বাড়তে শুরু করে। আর এমনটা হলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কাও। আসলে নুন মানেই সোডিয়াম, আর এই খনিজটির মাত্রা রক্তে যত বাড়ে, তত পটাশিয়ামের পরিমাণ কমতে শুরু করে। যে কারণে ব্লাড ভেসেলের উপর চাপ বাড়তে থাকে। যে কারণে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।

২. স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কমতে শুরু করলে ব্রেনের অন্দরে অক্সিজেনের অভাব ঘটতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ব্রেন সেলেরা মরতে থাকে। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে নানাবিধ ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। এখন প্রশ্ন হল মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয় কেন? আসলে শরীরে নুনের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ বাড়তে থাকে। আর ব্লাড প্রেসার বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। আর একবার যদি ছোট ছোট স্ট্রোক হতে শুরু করে, তাহলে ব্রেনে রক্তের সরবরাহ কমতে শুরু করে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন মস্তিষ্কের ভাল-মন্দের সঙ্গে নুনের যোগটা কতটা গভীর। তাই সাবধান!

৩. হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে: বেশ কিছু কেস স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়বে না কমবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে রক্তচাপের উপর। ব্লাড প্রেসার যদি বাড়তে থাকে, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই হার্টের উপর চাপ বাড়তে শুরু করে, আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বাড়ে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও। আসলে ররক্তচাপ বাড়তে থাকেল হার্টে ঠিক মতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে হার্টের পেশীরা শক্ত হতে শুরু করে। যে কারণে হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

৪. স্টামাক ক্যান্সার আক্রমণ শানায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দেহে নুনের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে নানা কারণে শরীরে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক একটি জীবাণুর মাত্রাও বাড়তে শুরু করে, যা দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্টামাকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সেই সঙ্গে শরীরের এই অংশে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই এমন মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে রোজের ডেয়েটে নুনের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমান। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!

৫. অস্টিওপোরোসিস: শরীরে নুনের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ক্ষমতা কমতে থাকে। কারণ হাড়ের খাবার হল ক্যালসিয়ামে। তাই তো এই উপাদানটির মাত্রা কমলে একে একে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় জয়েন্ট পেনও। ফলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাই আপনি যদি না চান, এমন ঘটনা আপনার সঙ্গেও ঘটুক, তাহলে নুন খাওয়ার পরিমাণ কমাতে ভুলবেন না যেন!

৬. ওজন বৃদ্ধি পায়: সরকারি এবং বেসরকারি পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে দেখতে পাবেন গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ওবেসিটি সমস্যা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে, যে কারণে বেড়েছে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের রোগ এবং ব্লাড প্রেসারের মতো মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও। তাই তো বেশি মাত্রায় নুন খেতে মানা করছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু নুনের সঙ্গে ওবেসিটির কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে নুনের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে জল তেষ্টা খুব বেড়ে যায়, আর আজকের প্রজন্ম তেষ্টার সময় জলের পরিবর্তে ঠান্ডা পানীয় খেতেই বেশি ভালবাসে। ফলে কোলড্রিঙ্ক খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে শরীরে ক্যালরি প্রবেশের মাত্রাও। ফলে ওজন বাড়তে সময় লাগে না।

Random Post