সপ্তাহে ৩-৪ দিন ৩টে করে কাঁঠালের কোয়া খেতে কেন বলছেন চিকিৎসকেরা?

চিকিৎসকেরা কিছু খেতে কেন বলেন? কেন আবার বলবেন নিশ্চয় কিছু উপাকারিতা আছে তাই এমন উপদেশ দিচ্ছেন! একেবারে ঠিক! তাহলে এখন প্রশ্ন হল কাঁঠালের এমন কী উপকারিতা আছে যে এই ফলটি না খেলে শরীরের বিপদ হয়ে যাবে? আসলে বন্ধু এই "ট্রপিকাল" ফলটির অন্দরে মজুত রয়েছে ১৫৫ ক্যালরি, ৪০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ৩ গ্রাম প্রোটিন, দিনের চাহিদার ১০ শতাংশ ভিটামিন এ, ১৮ শতাংশ ভিটামিন সি, ১১ শতাশ রাইবোফ্লবিন এবং ১৪ শতাংশ পটাশিয়াম। সেই সঙ্গে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপারের মতো খনিজ, যা নানা ভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। যেমন ধরুন...

১. হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে:
বয়স্কালে আর্থ্রাইটিস মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে যদি না চান, তাহলে এখন থেকেই সপ্তাহে ৩-৪ দিন কাঁঠাল খেতে ভুলবেন না যেন! আসলে এই ফলটির অন্দরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর হাড় যখন একবার শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে, তখন নানাবিধ বোন ডিজিজ যে আর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!

২. চুলের সৌন্দর্য বাড়ে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কাঁঠাল খাওয়া মাত্রা নানা কারণে সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, যে কারণে দেহের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি দূর হতেও সময় লাগে না। ফলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।

৩. ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে:
ফর্সা ত্বকের অধিকারী হয়ে উঠতে কে না চায় বলুন! কিন্তু এই স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হবে সে সম্পর্কে যদিও অনেকেই খোঁজ রাখেন। এই যেমন কাঁঠালের কথাই ধরুন না। এই ফলটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে যে ত্বক ফর্সা হয়ে উঠতে পারে, সে সম্পর্কে কি আপনাদের জানা ছিল! আসলে এই ফলটির অন্দরে উপস্থিত ফাইবার, শরীরে প্রবেশ করার পর দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।

৪.হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
হে খাদ্যরসিক বাঙালি এদিক-সেদিক খাওয়ার কারণে কী গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা রোজের সঙ্গী হয়ে উঠেছে? তাহলে তো বেশি করে কাঁঠাল খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই ফলটির অন্দরে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার, একদিকে যেমন পাকস্থলির ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজমের উন্নতি ঘটতে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমাতেও কাঁঠালের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৫. ভিটামিন এ-এর ঘাটতি মেটে:
ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং কোষের গঠনে এই ভিটামনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই বিশেষ ভিটামিনটি প্রচুর মাত্রায় রয়েছে কাঁঠালে। তাই তো এই ফলটি খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি হাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে শরীরের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

৬. ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কাঁঠালে উপস্থিত ফাইবার এবং প্রাকৃতিক সুগার, রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৭.এনার্জির ঘাটতি দূর হয়:
গরমটা যা বেড়েছে তাতে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরাটা বেজায় স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু জানেন কি কাঁটাল খাওয়া শুরু করলে ক্লান্তিবোধ দূর হতে সময় লাগে না। কারণ এই ফলটির অন্দরে উপস্থিত ভিটামিন বি এবং প্রোটিন, দেহের অন্দরে এনার্জির ঘাটতি দূর করে। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে চোখে পরার মতো।

৮. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁঠালে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট এবং ফ্লবোনয়েড রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরকে ভিতর থেকে এতটা শক্তিশালী কোরে তোলে যে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ডি এন এ-কে সুরক্ষা প্রদানের মধ্যে দিয়েও ক্যান্সারে রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে:
কাঁঠালে উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর সোডিয়াম লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে রক্তচাপ কমতে একেবারেই সময় লাগে না। এই কারণেই তো ব্লাড প্রেসারে ভুগতে থাকা রোগীদের রোজের ডায়েটে দু কোয়া করে কাঁঠাল রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক থাকে। ফলে রক্তেচাপ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

১০. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে:
স্ট্রেস এবং পরিবেশ দূষণের কারণে কি ত্বকের সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে? সেই সঙ্গে এমনভাবে বলিরেখা প্রকাশ পয়েছে যে ত্বকের বয়সও গেছে বেড়ে? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই কাজে লাগাতে শুরু করুন কাঁঠালকে। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। এক্ষেত্রে কাঁঠালের বীজকে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখার পর সেটি গুঁড়ো করে মুখে লাগালে বলিরেখা তো কমবেই, সেই সঙ্গে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যও ফিরে আসবে। প্রসঙ্গত, টানা ৬ সপ্তাহ যদি এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য নিয়ে যে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।

১১. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
এই ফলটির অন্দরে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন নামক একটি উপাদান, যা চোখের অন্দরে "অক্সিডেটিভ স্ট্রেস" এর মাত্রা কমায়। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি নানাবিধ চোখের রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

১২. কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমে:
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খাওয়া শুরু করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে একেবারে সময়ই লাগে না। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদনটির অন্দরে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশনের মতো রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১৩. প্রোটিনের চাহিদা মেটে:
শরীরকে সচল রাখতে জলের পরেই যে উপাদানটির প্রয়োজন পরে, সেটি হল প্রোটিন। তাই তো প্রায়শই কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই ফলটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা দেহের অন্দরে এই উপাদানটির ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি শরীরের গঠনেও সাহায্য করে থাকে।

১৪. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে:
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চান তো? তাহলে কাঁঠাল খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই ফলটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুটি উপাদান ইমিউন পাওয়ারকে এতটা বাড়িয়ে দেয় যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না। সেই সঙ্গে কমে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

১৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে একবাটি কাঁঠাল খেলে এত মাত্রায় পেট ভরে যায় যে বহুক্ষণ ক্ষিদে পায় না। ফলে খাবার খাওয়ার মাত্রা কমতে থাকে। আর এমনটা হলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ ঘটে কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, শরীরে জমে তাকা অতিরিক্তি চর্বি ঝরে যেতেও সময় লাগে না।


Random Post