নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়া উচিত কেন জানেন?


হাজার হাজার বছর ধরে প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে আছে একটি শক্তিশালী উপাদান। যার খোঁজ পয়েছেন যারা, তাদের জীবন গিয়েছে বদলে, আর যারা পাননি, তাঁদের পকেট হয়েছে ফাঁকা। কী বলছি ঠিক বুঝতে পারছেন না, তাই তো? সহজ কথায় প্রকৃতির ঝুলিতে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান সঞ্চিত রয়েছে, যা ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসাতেও কাজে আসেত পারে। কিন্তু সমস্যাটা হল এই প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে জানা আছে খুব কম সংখ্যক মানুষের। তাই তারা আজও আয়ুর্বেদ চিকিৎসার উপর ভরসা রাখতে না পেরে ছুটছে আধুনিক চিকিৎসার পিছনে। এতে একদিকে যেমন পকেট খালি হচ্ছে, তেমনি রোগ সেরে যাওয়ার গ্যারান্টিও মিলছে না। আজও প্রকৃতির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর সুযোগ যারা পাননি, তাদের কথা ভেবেই এই প্রবন্ধটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই লেখায় এমন একটি গুল্মের সন্ধান দেওয়া হবে, যাকে গত ৩০০০ বছর ধরে কাজে লাগানো হচ্ছে নানা রোগের চিকিৎসায়। আর কেন হবে নাই বা বালুন! একাধিক আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণ মিলেছে যে নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে একাধিক মারণ রোগের ফাঁদ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই রোগমুক্ত জীবনের স্বপ্ন যারা দেখেন, তাদের এই প্রবন্ধে একবার চোখ রাখতেই হবে। নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি খেলে সাধারণত যে যে উপকার পাওয়া যায়, সেগুলি হল...

১. থাইরয়েড রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে: নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে এমন ধরনের শারীরিক সমস্যার প্রকোপ কমতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ অশ্বোগন্ধার রস শরীরে প্রবেশ করার পর থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।

২. ডায়াবেটিস রোগকে দূরে রাখে: ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিততে "সাইলেন্ট কিলার" নামে পরিচিত ডায়াবেটিস রোগ থেকে দূরে থাকতে অশ্বগন্ধাকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। আসলে একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে এই গুল্মটির শরীরে এমন কিছু অজানা উপাদান রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুনভাবে কাজে আসে। তাই যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা এই ঘরোয়া চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। এমনটা করলে উপকার যে মিলবে, তা হলফ করে বলতে পারি।

৩. স্ট্রেস কমায়: অশ্বগন্ধায় উপস্থিত অ্যান্টি-স্ট্রেস প্রপাটিজ নিমেষে মানসিক চাপকে কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এই মহৌষধিটি গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের সার্বিক কর্মক্ষমতাও চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে শক্তপোক্ত করে তুলতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। আর ইমিউনিটি যখন একবার বেড়ে যায়, তখন ছোট-বড় কোনও রোগের পক্ষেই ক্ষতিসাধণ করা সম্ভব হয় না। প্রসঙ্গত, অশ্বগন্ধায় প্রচুর মাত্রায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এই প্রকৃতিক উপাদানটি প্রতিদিন খেলে সংক্রমণ সহ একাধিক রোগ নিয়ে কোনও চিন্তাই থাকে না। শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে শ্বেত এবং লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি প্লেটলেটের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাতেও সাহায্য করে। সেই কারণেই তো এই গুল্মটি ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাতেও এতটা কাজে আসে।

৫.রক্তাল্পতা দূর করে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত অশ্বাগন্ধার রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে লহিত এবং শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দ্রুত কমে যায়। এই কারণেই তো অ্যানিমিকদের নিয়মিত এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা।

৬. অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমায়: বেনারেস হিন্দু ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধার অন্দরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা অ্যাংজাইটি কমানোর পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, আজকাল কাজের চাপ সহ আরও নানা কারণে যুবসমাজের মধ্যে যে ভাবে অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশনের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা যেন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

৭.ক্যান্সার রোগকে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয় না: ড্রিঙ্কিং এবং স্মোকিং-এর তো কু-অভ্যাস নেই, তাহলে ভয় কিসের? সমীক্ষা বলছে এমন নেশা না থাকলেও আরও নানা কারণে শরীরে ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে পারে। তাই সাবধান থাকাটা জরুরি। আর এক্ষেত্রে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে অশ্বগন্ধা। কারণ গবেষণা বলছে, এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়া যেমন আটকায়, তেমনি কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: আপনি কি অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের কারণে চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই অশ্বগন্ধা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একদিকে যেমন রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি অন্যদিকে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এক কথায় হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অশ্বগন্ধার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৯. বাবা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়: স্ট্রেস এবং অতিরিক্ত মাত্রায় কম্পিউটার ব্যবহারের কারণ অধিকাংশ পুরুষেরই স্পার্ম কাউন্ট কমছে। ফলে বাড়ছে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা। কিন্তু এদিকে আমাদের জৈনন্দিন জীবন এমন হয়েছে যে কম্পিউটার বা স্ট্রেস থেকে দূরে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে উপায় কী? এক্ষেত্রে নিয়মিত অশ্বোগন্ধা খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে স্পার্ম কাউন্ট চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে বাবা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হয় না। তাই বন্ধুরা সময় থাকতে থাকতে সাবধান হন, না হলে কিন্তু...!

Random Post