নিয়মিত আমলকি খেলে কত উপকার পাওয়া যায় জানেন?


একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রোজের ডায়েটে আমলকির অন্তর্ভুক্তি ঘঠালে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে একাধিক জটিল রোগও দূরে থাকে। শুধু তাই নয়, আমলকির শরীরে উপস্থিত ভিটামিন সি সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়, সেই সঙ্গে স্কিনের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, আমলকির আরও অনেক উপকারিতা আছে। যেমন ধরুন...

১. আলসারের মতো রোগকে দূরে রাখে: প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ থাকার কারণে এই প্রকৃতিক উপাদানটি আলসারের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই ফলটি খাওয়া মাত্র শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আলসারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। প্রসঙ্গত, আমলকিতে উপস্থিত ভিটামিন সি, মাউথ আলসারের প্রকোপ কমাতেও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে ।

২. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: আমলকিতে ক্রোমিয়াম নামে একটি উপাদান থাকে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার সুযোগই পায় না। তাই সবশেষে একথা বলতেই হয় যে আমলকি খেলে কোনও ক্ষতি হয় কিনা, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত জানা না গলেও এই ফলটি যে শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়, সে বিষয়ে যদিও কোনও সন্দেহ নেই।

৩. হজমে উন্নতি ঘটায়: দেখুন বাঙালি হয়ে জন্মেছি যখন, তখন একটু পেটুক তো হবই। আর সে কারণে গ্যাস-অম্বল যে রোজের সঙ্গী হবে, তা আর নতুন কথা কী! তাই তো কব্জি ডুবিয়ে মুড়ি ঘন্ট, মাছের কালিয়া আর পাঁঠার কারি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমলকিও যদি খেতে পারেন, তাহলে বদহজম নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। কারণ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের পেটের রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

৪. সংক্রমণের আশঙ্কা কমে: ভিটামিন সি হল সেই ব্রহ্মাস্ত্র, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে এতটাই মজবুত করে দেয় যে কোনও জীবাণুই সেই দেওয়াল ভেদ করে শরীরের অন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ওয়েদার চেঞ্জের সময় সর্দি-কাশির ভয়ও দূর হয়। আর একথা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন যে আমলকি হল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। তাই এই ফলটি যদি নিয়মিত কাঁচা অবস্থায় অথবা শুকিয়ে খেতে পারেন, তাহলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে যে আর চিন্তায় থাকতে হবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।

৫.ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে: পরিসংখ্যান বলছে যত দিন যাচ্ছে, তত যেন ক্যান্সার আমাদের ছায়া হয়ে উঠছে। মানে মানুষ যেখানে, সেখানেই এই রোগ নিজের থাবা বসাচ্ছে। তাই তো আগামী ৩-৪ বছরে আমাদের দেশে প্রতি বছর নতুন করে এই মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষে এসে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এমন অবস্থায় আপনার বিশ্বস্ত সেনাপতি হয়ে উঠতে পারে আমলকি। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানদের বার করে দিয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।

৬. গল ব্লাডার স্টোনের মতো রোগকে দূরে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আমলকি খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা শরীরে জমতে থাকা কোলেস্টেরলকে বাইলে রুপান্তরিত করে দেয়। ফলে গল ব্লাডারে অতিরিক্ত মাত্রায় কোলেস্টেরল জমে গিয়ে স্টোন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। এই কারণেই তো যাদের পরিবারে হাই কোলেস্টেরল রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত একটা করে আমলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

৭.শরীরের বয়স কমে: আমলকিতে উপস্থিত একাধিক অ্যান্টি-এজিং প্রপাটিজ শরীরের উপর বয়সের চাপ পরতেই দেয় না। ফলে বয়সের কাঁটা পাঁচের ঘর পেরলেও তার আঁচে শরীরে ভেঙে যায় না। তাই শরীরকে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যদি চনমনে রাখতে চান, তাহলে একদিনও আমলকি খেতে ভুলবেন না যেন!

৮. বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: হার্টকে সুস্থ রাখতে চান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে রোজ একটা করে আমলকি খাওয়া মাস্ট! কারণ এতে উপস্থিত একাধিক শক্তিশালী উপাদান, হার্টের আর্টারিকে আক্রমণ করা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও আর থাকে না।

৯.ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়: আমলিতে এমন কিছু খনিজ এবং উপাকারি ভিটামিন আছে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ত্বকের অন্দরে জলের ঘাটতি দূর করে, সেই সঙ্গে পুষ্টির চাহিদাও মেটাও। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আমলকি শুকিয়ে তা দিয়ে বনানো পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো দই এবং মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একথা হলফ করে বলতে পারি যে খাতায় কলমে আপনার বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স ভুলেও বাড়ার সাহস পাবে না।

Random Post