কাঁঠালের বিচি খেলে কত উপকার পাওয়া যায় জানা আছে?

আপনাদের জানা আছে কি কাঁঠালের বীজ খেলে কী হতে পারে? গবেষণা বলছে এমনটা করলে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে অনেক উপকার মেলে। আসলে কাঁঠালের বীজে রয়েছে থিয়ামিন, রাইবোফ্লেবিন নামে দুটি উপাদান, যা দেহে এনার্জির ঘাটতি দূর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, এই প্রকৃতিক উপাদানে উপস্থিত জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ত্বককে সুন্দর করে তোলার পাশাপাশি একাধিক রোগকে দূরে রেখে শরীরকে সার্বিকভাবে চাঙ্গা করে তুলতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার লাগে। যেমন...

১. কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমায়: এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে কোষ্ঠ্যকাটিন্যের মতো রোগের প্রকোপ কমে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কোলোনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। তাই তো বলি বন্ধু যাদের প্রতিদিন সকালে বেজায় কষ্ট পোয়াতে হয়, তাদের রোজের ডেয়েটে কাঁঠালের বীজ অন্তর্ভুক্ত করা মাস্ট!

২. প্রোটিনের ঘাটতি মেটে: নিয়মিত মাছ-মাংস খাওয়ার সুযোগ হয় না নাকি? তাহলে বন্ধু দেহের অন্দরে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে নিয়মিত কাঁটালের বীজ খাওয়া শুরু করতে পারেন। আসলে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁঠালের বীজে যে পরিমাণে প্রোটিন থাকে, তা দেহের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, পেশীর গঠনের উন্নতি ঘটাতে এবং মেটাবলিজম রেট বাড়াতে এই প্রকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৩. সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: বর্ষাকালে নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে কাঁঠালের বীজ আপনাকে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে। আসলে এতে উপস্থিত একাধিক অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এলিমেন্ট জীবাণুদের দূরে রাখার মধ্যে দিয়ে নানাবিধ ফুড-বন এবং ওয়াটার বন ডিজিজের প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এখানেই শেষ নয়, একাদিক কেস স্টাডি একথা প্রমাণ করেছে যে হজমের সমস্যা কমাতেও কাঁটালের বীজ দারুন কাজে আসে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: পরিমাণ মতো কাঁঠালের বীজ নিয়ে প্রথমে কিছুটা সময় রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর সেগুলি বেটে নিয়ে চটজলটি গুঁড়ো করে ফেলুন। এই গুঁড়ো পাউডারটি খেলে নিমেষে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা কমে যায়। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। আসলে এতে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. স্ট্রেসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: অফিসে কাজের চাপ এমন বেড়েছে যে মাথা থেকে ধোঁয়া বেরতে শুরু করেছে? ফিকার নট! হাতের কাছে কাঁঠালের বীজ আছে কি? যদি না থাকে, তাহলে এক্ষুনি কিনে এনে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন নিমেষে মানসিক চাপ কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা মস্তিষ্কের অন্দরে কেমিকেল ব্যালেন্স ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।

৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: কাঁঠালের বীজে উপস্থিত ভিটামিন এ, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি একাধিক চোখ সম্পর্কিত সমস্যাকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বুড়ো বয়সে যদি চশমা ব্য়বহার করতে না চান, তাহলে আজ থেকেই কাঁঠালের বীজকে সঙ্গে রাখতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

৭. ত্বকের বয়স কমে: খাতায় কলমে বয়স বাড়ালেও ত্বককে যদি আজীবন তরতাজা এবং সুন্দর রাখতে চান, তাহলে আজ থেকেই ব্যবহার শুরু করুন কাঁঠালের বীজের। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো বীজ নিয়ে প্রথমে গুঁড়ো করে নিন। তারপর সেটি অল্প পরিমাণ দুধের সঙ্গে মিশে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এই পেস্টটি প্রতিদিন মুখে লাগালে দারুন উপকার পাওয়া যায়। আর যদি হাতের কাছে মধু থেকে থাকে, তাহলে সেটিও এই পেস্টটি বানানোর সময় কাজে লাগাতে পারেন। দেখা গেছে পেস্টটির সঙ্গে মধু যোগ করলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য আরও বৃদ্ধি পায়।

৮. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে: জিবিডি সার্ভে অনুসারে অ্যানিমিয়ায় রোগীর সংখ্যার দিক থেকে গত এক দশক ধরে সারা বিশ্বের মধ্যে ভারত এক নম্বরে। আর এত সংখ্যক রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা এবং বাচ্চা। এখন প্রশ্ন হল, এমন পরিস্থিতি হল কেন আমাদের দেশে? সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে এই রোগের বিষয়ে সচেতনতার অভাব, ঠিক মতো খেতে না পাওয়া এবং আরও নানা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণ এক্ষেত্রে দায়ি। মজার বিষয় কি জানেন, এই অবস্থার পরিবর্তনে সক্ষম এমন উপায় হাতের কাছে থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই সে সম্পর্কে জানেন না। কী সেই উপায়? গবেষণা বলছে কাঁঠালের বীজে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা খুব অল্প দিনেই রক্তাল্পতার মতো সমস্য়া দূর করতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। আর কাঁঠালের বীজের দামও এমন কিছু নয়। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়ে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মানুষকেও সচতন করে তোলা। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিই পারে আমাদের দেশে অ্যানিমিয়া রোগের প্রকোপ কমাতে।

Random Post