দিনের কোন সময় শরীরচর্চা করলে ভাল ফল পাওয়া যায় জানা আছে?


শরীরকে সুস্থ রাখতে আজকের যুবসমাজের একটা বড় অংশ নিয়মিত শরীরচর্চা করলেও তারা সঠিক ফল পান কি? এমন প্রশ্ন এই কারণে করছি কারণ একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে কোন সময় শরীরচর্চা করলে শরীরের সব থেকে বেশি উপকার হয়, সে বিষয়ে জানা না থাকার কারণে জিমে গিয়ে বা অন্যান্য নানাভাবে ঘাম ঝরালেও কাঙ্খিত ফল পেতে অনেক সময় লেগে যায়। সেই কারণেই তো আজ এই প্রবন্ধে শরীরচর্চা করার সঠিক সময় সম্পর্কে আলোচনা করা হল এবং সেই সঙ্গে নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে শরীরের কী কী উপকার হয়, সে বিষয়ের উপরও আলোকপাত করা হল। প্রসঙ্গত, দিনের যে কোনও সময় শরীরচর্চা করা গলেও একাধিক গবেষণার পর বিশেষজ্ঞরা একটা বিষয় নিশ্চিত হয়েছেন যে এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় হল সকাল বেলা। কারণ এই সময় শরীর এবং মস্তিষ্ক উভয়ই রেডি থাকে পরিশ্রম করার জন্য। ফলে দিনের এই সময় শরীরচর্চা করলে কম সময়ে দারুন ফল মেলে। আরেকটা কারণেও বিশেষজ্ঞরা সকাল বেলা শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কী সেই কারণ? সারা রাত ঘুমের পর সকালবেলা শরীর একেবারে ক্লান্তি মুক্ত থাকে। ফলে এই সময় যে পরিমাণ এনার্জি খরচ করার তাগিদ থাকে, তা সারা দিন অফিস করার পর প্রায় থাকে না বললেই চলে। ফলে সন্ধ্যাবেলা বা রাতে এক্সারসাইজ করলে সেভাবে মনযোগ দিয়ে করা সম্ভব হয় না। ফলে ফল পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এখন পশ্ন হল, নিয়মিত সকালবেলা এক্সারসাইজ করলে কী কী উপকার মিলতে পারে?

১. মন নিমেষে খুশি হয়ে যায়: একাধিক সমীক্ষা অনুসারে কর্মজীবন সংক্রান্ত স্ট্রেসের কারণে আজকাল সবারই হাল এত বেহাল যে খুশি মনের সন্ধান পাওয়া যেন দূরহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়িছে। এমন পরিস্থিতিতে খুশি থাকতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ এক্সারসাইজ করার সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করে।

২. মনোবল বৃদ্ধি পায়: খেয়াল করে দেখবেন এক্সারসাইজের প্রথম দিনে সবাই প্রায় একটা গোল সেট করে থাকেন এবং প্রতিদিন চেষ্টা করেন সেই গোল এচিভ করার। এমনটা করতে গিয়ে মনোবল এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করতে কোনও কষ্টই হয় না। প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা টার্গেট সেট করে এক্সারসাইজ করেন তাদের যে কোনও বিষয়ে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯১ শতাংশ বেড়ে যায়। এবার বুঝেছেন তো শরীরচর্চা কেবল শরীরের গঠন করে না, সেই সঙ্গে মনকে যেমন চাঙ্গা করে তোলে, তেমনি জীবনের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যও ফিরিয়ে আনে।

৩. হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: প্রায় ৩,৩৯০০০ মানুষের উপর ৩০৫ টি ট্রায়েল করার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে প্রতিদিন অল্প বিস্তর এক্সারসাইজ করলে হার্টের কর্মক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ধারে কাছে ঘেঁষারও সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা এমন বৃদ্ধি পায় যে ছোট-বড় কোনও রোগই শরীরকে কাবু করতে পারে না। এতদূর পরার পর নিশ্চয় ভাবছেন শরীরচর্চার সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক? আসলে এক্সারসাইজ করার সময় সারা শরীরের পাশাপাশি হর্টেও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে হৃদপিন্ডের কর্মক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে কোনো ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতেও কিন্তু এক্সারসাইজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. অনিদ্রা দূর হয়: দিনের পর দিন যদি রাতে ঠিক মতো ঘুম না হয়, তাহলে অল্প বিস্তর শরীরচর্চা শুরু করতে পারেন। এমনটা করলে দেখবেন অনিদ্রার সমস্যা কমে যেতে একেবারেই সময় লাগবে না। আসলে নিমিত এক্সারসাইজ করলে সার্কাডিয়ান রিদিমের উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল উঠে দৌড়-ঝাঁপ করার রাতে ঘুম আসতে একেবারেই সময় লাগে না।

৫. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়: অনেকেই মনে করেন যে এক্সারসাইজ করলে ক্লান্তি বাড়ে। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। কারণ গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে এনার্জির ঘাটতি দূর করতে এক্সারসাইজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ কোনও ধরনের ফিজিকাল অ্যাকটিভিটি করার সময় শরীর, ভিতর এবং বাইরে থেকে এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে এনার্জির ঘাটতি দূর হতে সময়ই লাগে না। এই কারণেই তো ক্লান্ত লাগার সময় ধীরে ধীরে একটু হাঁটাহুঁটি করতে বলেন চিকিৎসকেরা। কারণ এমনটা করলে নিমেষে শরীর চনমনে হয়ে ওঠে।

৬. ব্রেন পাওয়ার বাড়ায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হাঁটলে, সাঁতার কাটলে বা দৌড়ালে ব্রেনের হিপোকম্পাস এরিয়াটি শক্তিশালী হতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে, তেমনি বুদ্ধির ধারও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ডিমেনশিয়া এবং আলঝাইমার্সের মতো ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

Random Post