সপ্তাহে কম করে ৩ দিন ঢেঁড়স সেদ্ধ খাওয়া উচিত কেন?

খাদ্য বিশারদদের করা বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে সেদ্ধ ঢেঁড়স খাওয়া শুরু করলে শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, নিয়াসিন, ভিটামিন সি, ই, কে, সেই সঙ্গে ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের প্রবেশ ঘটতে শুরু করে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে এই সবকটি উপাদানই নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। যেমন ধরুন...


১. সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: আমাদের রাজ্যে প্রতি বছর যে ভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে ঢেঁড়স খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই! কারণে এই সবজিটির অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র দেহের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে সান স্ট্রেকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

২. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: কিহে খাদ্যরসিক বাঙালি জিভের স্বাদ মেটাতে গিয়ে কি পেট বিগড়ে গেছে? তাহলে এবার থেকে সপ্তাহে ২-৩ দিন ঢেঁড়স সেদ্ধ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হজম ক্ষমতার উন্নতি তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ পেটের রোগও দূরে পালাবে।

৩. কিডনির ক্ষমতা বাড়ে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এক বাটি করে ঢেঁড়সের তরকারি খেলে কিডনির অন্দরে জমতে থাকা ক্ষতিকর উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: ঢেঁড়সে উপস্থিত ফাইবার যে শুধুমাত্র পেটের রোগের প্রকোপ কমায়, এমন নয়। সেই সঙ্গে স্কিনের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন করে যে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, এই সবজিটিতে উপস্থিত ভিটামিন সি, বলিরেখা কমিয়ে ত্বকের বয়স কমাতেও বিসেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. ফলেটের ঘাটতি দূর হয়: শরীরকে সচল এবং রোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে, ফলেট তার মধ্যে অন্যতম। তাই তো দেহের অন্দরে এই উপাদানটির ঘাটতি হওয়া একেবারেই উচিত নয়। এই কারণেই চো প্রতিদিন ঢেঁড়স খাওয়া উচিত। কারণ এই সবজিটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট, যা দেহের চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. খুশকির প্রকোপ কমে: বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত ঢেঁরস খাওয়া শুরু করলে স্কাল্পের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরে আসে। ফলে খুশকির মতো ত্বকের রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

৭.কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমে: ঢেঁড়সের শরীরে থাকা ফাইবার শুধুমাত্র হার্টের খেয়াল রাখে না, সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশন, বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে যদি নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়া যায়, তাহলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।

৮. হাড়ের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে: ঢেঁড়সে উপস্থিত ফলেট হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো ৪০-এর পর থেকে প্রতিটি মহিলার নিয়ম করে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত। আসলে একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে আমাদের দেশে মহিলাদের বয়স ৪০ পেরতে না পেরতেই তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন মহিলাদের ঢেঁড়স খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটা!

৯. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে: প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে প্রতিদিন এই সবজিটি খেলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি কোষেদের বিভাজনও ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে হওয়ার সুযোগ পায়। কারণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের কোষেদের গঠনে পরিবর্তন করার কোনও সুযোগই দেয় না। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, কোষেদের এই ভাবে চরিত্র বদল করে ক্ষতিকর কোষে রূপান্তরিত হওয়াকে "মিউটেশন অব সেল" বলা হয়ে থাকে।

১০. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: পরিসংখ্যান বলছে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটাও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা একটি রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে ভারতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়ান, যা আগামী কয়েক বছরে আরও বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে, তা জানা আছে? গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৬-৮ টা ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে।

১১. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: অতিরিক্ত কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে ঢেঁরসের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! কারণ এই সবজিটির অন্দরে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা যেমন কমে। সেই সঙ্গে বারে বারে খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

১২. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: শরীরে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে ঢেঁড়সের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটি ফাইবার সমৃদ্ধি। এই উপাদানটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১৩.অ্যাস্থেমার মতো রোগ দূরে পালায়: ওয়েদার চেঞ্জের সময় অথবা ধুলোবালি নাকে ঢুকলেই শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায় নাকি? তাহলে তো কষ্ট কমাতে ঢেঁড়সের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেই হবে। কারণ এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারি অ্যালার্জেনরা কোনও ধরনের ক্ষতি করার সুযোগই পায় না। ফলে অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমতে শুরু করে।

১৪. লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়: এতে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ গত কয়েক দশকে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। আমাদের দেশে তো অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে বিশেষ নীতিও গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এমন পরিস্থিতে এই সবজিটি কতটা কাজে আসতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে বোঝাতে হবে না।

Random Post