প্রতিদিন পনির খেলে হার্টের কি অবস্থা হতে পারে জানেন?


দুধে অরুচি রয়েছে এমন অনেকেই প্রায় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে প্রতিদিন পনির খেয়ে থাকেন। কেউ পছন্দ করেন কাড়াই পনির, তো কেউ পনির কোফতা। আবার এমনও অনেক আছেন, যারা কাঁচা পনির খেতেই বেশি ভালবাসেন। তবে যেভাবেই খান না কেন না কেন, এইভাবে প্রতিদিন সকাল-বিকাল পনির খাওয়া কি আদৌ উচিত? যদি সবদিক বিচার করে বলতে বলেন, তাহলে বলবো শরীরকে, বিশেষত হার্টকে সুস্থ রাখতে পনিরের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে রোজের ডায়েটে পনিরের মতো উপাদেয় খাবারকে রাখলে শরীরে এমন কিছু উপাদানে মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে হার্ট অ্যাটাক বা কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও। আসলে পনিরের অন্দরে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত মেদকে একেবারে কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। তাই হার্টকে চাঙ্গা রাখার মধ্যে দিয়ে যদি বেশি দিন সুস্থ ভাবে বাঁচার ইচ্ছা থাকে, তাহলে নিয়মিত পনির খেতে ভুলবেন না যেন! প্রসঙ্গত, পনির যে কেবল হার্টের খেয়াল রাখে এমন নয়। এই দুগ্ধজাত খাবারটি আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, যেমন...

১. প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে: শরীরের গঠনে প্রতিদিন প্রোটিনের প্রয়োজন পরে। তাই কোনও ভাবেই যাতে দেহের অন্দরে এই উপাদানটির ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তাহলে প্রশ্ন হল কিভাবে খেয়াল রাখবেন এই বিষয়টার? খুব সহজ! নিয়মিত পনির খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন আর এই নিয়ে কোনও চিন্তা থাকবে না। প্রসঙ্গত, ১০০ গ্রাম পনিরে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে কতটা সক্ষম এই দুগ্ধজাত খাবারটি।

২. সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: পনিরের অন্দরে বেশি মাত্রায় প্রোটিন থাকার কারণে এই খাবারটি খাওয়া মাত্রা রক্তে হঠাৎ করে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় না। বরং শরীরের গঠনে নানাভাবে কাজে আসে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিস রোগীদের এই খাবারটি নিয়মিত খেতে বলেন চিকিৎসকেরা। এমনটা করল একদিকে যেমন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমনি দেহের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়।

৩. দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত পনির খাওয়া শুরু করলে হাড় শক্তপোক্ত হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে দুধের শরীর থেকে তৈরি হলেও পনিরে পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা দুধের থেকে অনেক বেশি থাকে। তাই দুধ খেতে ইচ্ছা না করলে কোনও চিন্তা নেই, বরং পনির খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বেশি উপকার মিলবে।

৪. ওজন কমায়: অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছে? তাহলে পনির খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ পনিরের শরীরে লাইনোলেইক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে, যা এক ধরনের উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানটি "ফ্যাটি বার্নিং প্রসেস"কে এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে দ্রুত ওজন কমতে শুরু করে।

৫. একাধিক রোগকে দূরে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে পনিরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরকে ভিতর থেকে এত মাত্রায় শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই নিয়মিত পনির খাওয়া শুরু করলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে যে চিন্তা অনেকটাই কমে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

৬. ব্যথা কমায়: প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে পনির খাওয়া শুরু করলে পিঠের এবং জয়েন্টের ব্যথা তো কমেই, সেই সঙ্গে শরীরের এদিক-সেদিকে হওয়া নানা যন্ত্রণা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো দেখতে একেবারে আকর্ষণীয় না হলেও গুণে কিন্তু পনির সব দিক থেকে সর্বজয়ী। পনির খেলে কি ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে? পনির খেলে কি ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে? এত উপকারিতার পরেও একদল গবেষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। একথা ঠিক যে পনিরের শরীরে ক্যালরির পরিমাণ একটু বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালরি থাকে প্রায় ২৯২। এই কারণেই অনেকেই অনেকের মনে হয় পনির খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে পনির খেলে যে পরিমাণ ক্যালরি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তা ঝরিয়ে ফেলতে একেবারেই বেশি সময় লাগে না। কিন্তু যে পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদানের চাহিদা মেটে, তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই সঙ্গে রোগমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। তাই সুস্থ জীবনের পথে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পনিরকে ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু!

Random Post