মুলো খেলে কি সত্যিই লোকসমাজে সম্মান যাওয়ার ভয় থাকে?


মানুষের সবথেকে বড় দুর্বল দিক কি জানেন? একবার কোনও কিছু সম্পর্কে খারাপ ধারণা হয়ে গেলে সেই ধরণা আমৃত্যু একই থেকে যায়। যেমন মুলোর কথাই ধরুন না। এই সবজিটি খেলে নাকি প্রচন্ড উইন্ড পাস হবে। সেই সঙ্গে লোক সমাজে নাকি অস্বস্তি বাড়বে, এমন নানা ভিত্তিহীন ধারণাকে সত্য মেনে সিংহভাগই মুলোর ধারে কাছে ঘেঁষতে চান না। ফলে হাতের কাছে থাকা এক মহৌষধি সুফল পাওয়া থেকে সারা জীবন বঞ্চিত থেকে যান। নিশ্চয় ভাবছেন যে অমন সাদা রঙের বিদকুটে দেখতে সবজির কী গুণ থাকতে পারে, তাই তো? গবেষণা বলছে মুলোর শরীরে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ফলেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন এ। এই সবকটি উপাদান শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে রোগমুক্ত রাখার পাশাপাশি সার্বিকভাবে সুস্থ জীবনের পথকে প্রশস্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করেছে মুলো কীভাবে শরীরকে রোগমুক্ত রাখে? চলুন তাহলে আরও কাছ থেকে একটু জানার চেষ্টা করা যাক মুলোর গুণাগুণ সম্পর্কে। তবে তার আগে একটা বিষয় জেনে রাখুন, তরকারি হিসেবে এই সবজিটি খেতেই পারেন। তাতে উপকার পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সর্বোত্তম উপকার পেতে যদি চান, তাহলে মুলোর রস খেতে হবে। এমনটা করলে কী হতে পারে জানেন?

১. ওজন কমায়: এই সবজির অন্দরে এমন কিছু উপাদান আছে যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমতে শুরু করে। আর এমনটা হওয়া মাত্র স্বাভাবিকভাবেই শরীরে ক্যালরির প্রবেশ অনেকটাই কমে যায়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে ক্যালরি ইনটেকের পরিমাণ যত কমতে থাকে, তত ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

২. শরীরে অন্দরে প্রদাহ কমায়: প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় প্রতিদিন যদি মুলোর রস খাওয়া যায়, তাহলে দেহের অন্দরে চোট-আঘাতের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফ্লেমেশন এবং কিডনির প্রদাহও কমে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি স্টোনের আশঙ্কা কমাতেও মুলোর রস নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

৩. এনজাইমের ঘাটতি দূর করে: মূলোর রসে মাইরোসিনেসি, এস্টারএসেস, অ্যামাইলেস এবং ডিয়াস্টেস নামে এনজাইমগুলি প্রচুর মাত্রায় থাকে, যা ফাঙ্গাল ইনফেকশেনর হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।

৪. ক্যান্সার সেলের গ্রোথ আটকায়: বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে শরীরকে এই মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। আর এই কাজে আপনাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য় করতে পারে মুলো। কীভাবে? আসলে মুলোর রসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন সি শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলেরে জন্ম এবং বৃদ্ধির আটকায়। বিশেষত কোলন, ইন্টেস্টিনাল,স্টমাক এবং কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই পানীয়টি দারুনভাবে কাজে আসে।

৫. শরীর বিষমুক্ত হয়: ব্লাডার, কিডনি, প্রস্টেট এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানদের শরীর থেকে বের করে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির কর্মক্ষমতা বাড়াতে মুলোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, শরীরের কোণায় কোণায় জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের ক্ষতি করার আগে তাদের কডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজটাও করে থাকে মুলোর রস। প্রসঙ্গত, শরীর যত টক্সিক মুক্ত থাকবে, তত স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে শরীর এবং মন চাঙ্গা এবং রোগ মুক্ত থাকবে।

৬. কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমায়: আপনি কি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে তো মুলোর রস আপনার রোজের সঙ্গী হওয়া উচিত। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি বাইলের প্রবাহ যাতে ঠিক মতো হয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

৭. নানাবিধ ত্বকের রোগকে দূরে রাখে: মুলোয় থাকা ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ব্রণ, একজিমা, ফুসকুড়ি সহ একাধিক ত্বকের রোগের উপশমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. অ্যাস্থেমাকে নিয়ন্ত্রণে থাকে: শ্বাস কষ্ট, সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশিতে একেবারে জর্জরিত হয়ে পরেছেন? ফিকার নট! আজ থেকেই মুলোর রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। আসলে মুলোর রস, লাং-এ জমতে থাকা মিউকাসের দেওয়ালকে ভেঙে দেয়। ফলে অল্প দিনেই অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, বমি ভাব, গলার ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে।

Random Post