জল খেলেও কি অম্বলের সমস্যা দেখা দেয়? তাহলে তো পেটের হাল ফেরাতে এই খাবারগুলি খেতেই হবে!

বেশ কিছু সমীক্ষা অনুসারে অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনপ্রণালীর কারণে যুবসমাজের মধ্যে গ্য়াস-অম্বলের সমস্যা এত মাত্রায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে যে তা চিন্তায় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক মহলের কাছে। আসলে চিন্তাটা এই কারণে যে কম বয়স থেকেই যদি এমন সব রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে, তাহলে তো সময় এখনও পরে আছে। পরে যে আরও কী কী অসুখ লেজুড় হবে, তা তো ভগবানই জানে! এখন প্রশ্ন হল, এমন রোগের হাত থেকে বাঁচার উপায় কী? এক্ষেত্রে আপনার রান্না ঘরে মজুত কিছু খাবারকে কাজ লাগান হবে,তাহলেই দেখবেন কেল্লাফতে! প্রসঙ্গত, যে যে খাবারগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...

১. আদা: রাস্তার খাবার খেতে খেতে পেটের এমন বেহাল দশা যে জল খেলেও বদ-হজম হয়ে যায়? তাহলে বন্ধু প্রতিদিন অল্প করে আদা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প সময়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতেও দেখবেন সময় লাগবে না। আসলে আদায় উপস্থিত অ্যান্ট-ইনফেলেমটরি উপাদান এক্ষেত্রে এমন খেল দেখায় যে কোনও ধরনের পেটের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগই পায় না।

২. লবঙ্গ: কী বলছেন মশাই লবঙ্গ খেলে গ্যাস-অম্বল সেরে যায়? একেবারেই! একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তাই এবার থেকে একটু বেশি মাত্রায় খাবার খাওয়া পর যদি বুক জ্বালা এবং ঢেকুর ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ১-২ টো লবঙ্গ খেয়ে ফেলতে ভুলবেন না যেন!

৩. খাবার সোডা: মাঝে মধ্যেই কি অ্যাসিডিটির সমস্যায় হয়ে থাকে? তাহলে কাজে লাগান এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস জলে ১ চামচ খাবার সোডা মিশিয়ে সেই জল পান করুন। প্রতিদিন এই মিশ্রনটি পান করলে দেখবেন আর কোনও দিন অ্যাসিডিটি হবে না। আসলে এই পানীয়টি অ্যান্টাসিডের কাজ করে থাকে। এই কারণেই তো এমন ধরনের সমস্যা কমাতে এই উপাদানটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৪. দারচিনি: এবার থেকে যখনই অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে, তখনই অল্প করে দারচিনি খেয়ে নেবেন। দেখবেন কষ্ট কমতে একেবারেই সময় লাগবে না। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদনটির অন্দরে থাকা একাদিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তেমনি পেটের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ঠিক মতো হজম না হওয়ার সমস্যা কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে অল্প করে দারচিনি দিয়ে তৈরি চা খেলে দেখবেন দারুন উপকার মিলবে।

৫. মৌরি: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে মৌরির অন্দরে থাকা বিশেষ এক ধরনের তেল পাকস্থলির কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। সেই সঙ্গে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে বদ-হজম এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না।

৬. অ্যালো ভেরা: এতে উপস্থিত নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, অ্যালো ভেরায় উপস্থিত অ্যাসিড, স্টমাকে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কর্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

৭. তুলসি পাতা: একেবারে ঠিক শুনেছেন। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে তুলসি পাতা দারুন কাজে আসে। এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা খুব অল্প সময়ে অ্যাসিডিটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তাই তো নিমেষে এমন রোগের প্রকোপ কমাতে ৩-৫ টি তুলসি পাতা জলে ভিজিয়ে, সেই জল ফুটিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন চোখের পলকে অ্যাসিডিটি কমে যাবে।

৮. ডাবের জল: গরমের সময় শরীরে জলের ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি স্টমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ স্বাভাবিক করতেও ডাবের জল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীরে উপস্থিতি অতিরিক্ত অ্যাসিডকে বের করে দিতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই তো অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

৯. বাদাম: আপনি কি প্রায়শই অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগে থাকেন? তাহলে খাবার পরপরই ২-৩ টি বাদাম খেয়ে নিতে ভুলবেন না। কারণ এমনটা করলে এমন ধরনের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা কমে। আসলে বাদামে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং অ্যালকেলাইন কমপাউন্ড, যা স্টামক অ্যাসিডিটির জন্য দায়ি অ্যাসিডদের ক্ষতি করার ক্ষমতা একেবারে কমিয়ে দেয়। ফলে গ্য়াস-অম্বলের কষ্ট কমতে সময় লাগে না।

১০. গুড়: শুনতে অবাক লাগলেও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে বাস্তবিকই এই খাবারটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে গুড়ের অন্দরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ইন্টেস্টাইনের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে, দেহের অন্দরে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এবং স্টমাকের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো গরম কালে বেশি করে গুড়ের সরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

১১.লস্যি: শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশপাশি এই পানীয়টি স্টামাক অ্যাসিডের কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গলা জ্বালা করার মতো সমস্যা কমে যায়। তাই তো এবার থেকে এমন ধরনের অসুবিধা দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস বাটার মিল্ক খেয়ে নেবেন। দেখবেন নিমেষে সমস্যা কমে যাবে। এক্ষেত্রে বাটার মিল্ক বানানোর সময় তাতে দই এবং অল্প করে নুন মিশিয়ে দিতে ভুলবেন না। আসলে এমনটা করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

১২. রসুন: অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস-অম্বল সংক্রান্ত নানা লক্ষণ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে।

Random Post