রামদেব বাবার দেখানো এই আসনগুলি নিয়মিত করলে দেখবেন কোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারবে না!

শরীরকে অসুস্থতার মিসাইল থেকে বাঁচাতে যদি চান, তাহলে সময় থাকতে থাকতে বাঙ্কার বানাতে হবে কিন্তু! আর এই বাঙ্কার বা সেফ হেবেন বানাতে যোগাসনের কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। তাই তো সুস্থ থাকতে যদি চান, তাহলে এই প্রবন্ধে আলোচিত আসনগুলি নিয়মিত করতে ভুলবেন না যেন! প্রসঙ্গত, একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে এই ব্যায়ামগুলি করা মাত্র দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। প্রসঙ্গত, এই আসনগুলি করতে কম-বেশি ১ ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু সুফল পাবেন মাত্রা ছাড়া। তাই তো বিশ্ব যোগাসন দীবসকে সামনে রেখে আজ নিজেকে কথা দিয়েই ফেলুন যে শরীরকে সুস্থ রাখতে একবার অন্তত এই লেখাটা পরবেই পরবেন! কারণ যদি এমনটা করেন, তাহলে শরীর যে একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবেই, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! এখন তাহলে প্রশ্ন হল মস্তিষ্ক এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কী কী যোগাসন করার প্রয়োজন রয়েছে?

১. উস্ট্রাসন: সংস্কৃতে উস্ট্রা কথার অর্থ হল উট বা ক্যামেল। তাই তো এই আসনটিকে ক্যামেল পোজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বজ্রাসনে বসে ধীরে ধীরে শরীটা সোজা করে, তারপর হাত দুটি পিছনে নিয়ে গিয়ে গোড়ালি ধরতে হবে। এইভাবে ৩০-৬০ সেকেন্ড একই অবস্থায় থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। প্রসঙ্গত, এই আসনটা নিয়মিত করলে কাঁধের সচলতা বাড়তে শুরু করবে। সেই সঙ্গে পা এবং হাতের ক্ষমতাও বাড়বে চোখে পরার মতো।

২. মলাসন: সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এই আসনটি করলে শরীরের নিচের অংশের কর্মক্ষমতা তো বৃদ্ধি পাবেই, সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটবে। সেই সঙ্গে ক্লান্তিও দূর হবে। এখন প্রশ্ন হল, এই আসনটি করতে হবে কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে বসতে হবে, যেমনটা আমরা বাংলা পায়খানায় পটি করতে বসার সময় বসে থকি। এইভাবে ৬০ সেকেন্ড থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে।

৩. নাদী শোধন প্রাণায়ম: এক্ষেত্রে প্রথমে বাবু হয়ে বসে পরতে হবে। খেয়াল রাখবেন বসে থাকাকালীন শিরদাঁড়া যেন সোজা থাকে। এবার হাতটা সোজা অবস্থায় হাঁটুর উপরে রাখুন। তারপর চোখ বন্ধ করে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডান দিকের ছিদ্রটি বন্ধ করে বাম দিকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নিতে থাকুন। কিছু সময় পরে একই ভাবে বাম নাকের ছিদ্র, বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে বন্ধ করে ডান নাক দিয়ে শ্বাস নিন। এইভাবে কম করে ২০ রাউন্ড করতে হবে। তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে সারা শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পতে শুরু করবে। ফলে রক্তে টক্সিনের মাত্রা যেমন কমবে, তেমনি স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করবে। প্রসঙ্গত, ২১ শতকে যে যে মারণ রোগে যুব সমাজ বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তার বেশিরবাগেরই পিছনে স্ট্রেস নামক কারণটি দায়ী। তাই একবার যদি স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে যে আর কোনও সমস্যাই হবে না, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!

৪. ওম মন্ত্র: পদ্মাসন বা সুখাসনে বসে চোখ বন্ধ করে জ্ঞান মুদ্রা অনুসরণ করুন। যেমনটা উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে। এবার বুড়ো আঙুলটা তর্জনীতে ছুঁয়ে গভীর শ্বাস নিন। তারপর শুরু করুন ধীরে ধীরে ওম মন্ত্রের উচ্চারণ। খেয়াল রাখবেন এই সময় শিরদাঁড়া যেন একদম সোজা থাকে। ওম মন্ত্রর উপর মনযোগ নিবেশ করে ৫ মিনিট আসনটি করতেই হবে। তবে ধীরে ধীরে এই আসনটি ২০-২৫ মিনিট করার চেষ্টা করবেন। তাহলেই দেখবেন রোগের জ্বালা একেবারে কমে গেছে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। শুধু তাই নয়, মানসিক চাপ, মাইগ্রেন, কনস্টিপেশন, বদ-হজম, এমনকী হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে।

৫. ধনুরাসন: পেটের উপর চাপ দিয়ে শুয়ে পরুন। এই সময় পা দুটি সোজা থাকবে এবং হাত থাকবে শরীরে ঠিক পাশে। এরপর ধীরে ধীরে পা দুটি পেছনের দিকে ভাঁজ করে পিঠের দিকে নিয়ে এসে হাত দিয়ে গোড়ালিটা ধরুন। এবার গভীর শ্বাস নিয়ে শরীরের সামনের দিকটা মাটিতে থেকে সামান্য উপরে তুলে নিন। এই সময় শুধু পেটটা মাটিতে লেগে থাকবে। আসনটি করার সময় শরীরে অবয়ব অনেকটা অনুকের মত হয়ে যায় বলেই এই ব্যায়ামটিকে ধনুরাসন বলে ডাকা হয়ে থাকে। যেমনটা উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে। এমন পজিশনে কিছুটা সময় থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন কমে করে তিনবার আসনটি করতে হবে। তহলেই দেখবেন হজমে সহায়ক এনজাইমের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করবে। ফলে বদহজমের সমস্যা কমতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস, পিঠে ব্যথা এবং ঘারে যন্ত্রণার মতো রোগকে একশো শতাংশ সারিয়ে তুলতেও এই আসনটি নানাভাবে সাহায্য করবে।

৬. শবাসন: পা দুটি যতটা সম্ভব ফাঁক করে শুয়ে পরুন। এই সময় চোখ বন্ধ থাকবে এবং শরীর এবং মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখতে হবে। প্রয়োজন শবাসনে থাকাকালীন যে কোনও একটা কিছু মন দিয়ে ভাবার চেষ্টা করবেন। প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিতে ৫ মিনিট আসনটি করলেই শরীর ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করবে।

৭. বজ্রাসন: হাঁটু মুড়ে পায়ের উপর বসে পরুন। খেয়াল রাখবেন এই আসনটি করার সময় পায়ের পাতা এক সঙ্গে লেগে থাকলেও গড়ালির মধ্যে কিন্তু ফাঁক থাকবে। আর শিরদাঁড়া থাকবে একেবারে সোজা এবং হাতটা থাকবে হাঁটুর উপরে। এমন পজিশনে কম করে ৫ মিনিট বসে থাকার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। প্রসহ্গত, প্রতিদিন এই আসনটি করলে নানাবিধ গ্যাস্ট্রো প্রবলেম, অর্থাৎ পেটের রোগের উপসমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ এবং হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Random Post