প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে দৌড়ালে কী কী উপকার পেতে পারেন জানেন?


"দৌড় হল এক ধরনের মেডিসিন, যা সব ধরনের রোগকে দূরে রাখে...।" চিকিৎসকেরা প্রায়শই এই কথাটা বলে থাকেন। কিন্তু আমরা শুনলে তো! তাই তো ২৫ পেরতে না পরতেই কেউ ডায়াবেটিস, তো কেউ ব্লাড প্রেসারের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে আয়ু কমিয়ে ফেলছেন। সেই সঙ্গে কমছে শরীরের সচলতাও! একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট, অর্থাৎ দিনে কম-বেশি ৩০ মিনিট যদি হাল্কা চালে একটু দৌড়াতে পারেন, তাহলে সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ওজন বৃদ্ধি, ব্লাড প্রসোর, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না। প্রসঙ্গত, নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস করলে এই উপকারিগুলি তো পাওয়া যায়ই, সেই সঙ্গে আরও কিছু ফল মেলে। যেমন ধরুন...

১. নিমেষে মন ভাল হয়ে যায়: মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে দৌড়ানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এন্ডোক্যানাবিনয়েডের মতো ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদের অবসান ঘটাতেও দৌড়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

২. শরীরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দৌড়ানোর সময় আমাদের শরীরে ইতিউতি জমে থাকা মেদ ঝরতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, দৌড় থামিয়ে দেওয়ার অনেক পর পর্যন্তও এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ফলে ব্যাপক মাত্রায় ওজন কমে। এই কারণেই তো শরীরকে মেদ মুক্ত রাখতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত দৌড়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৩. গোড়ালির কর্মক্ষমতা বাড়ে: সারা দিন ধরে আমাদের শরীরে উপরের অংশের ভার বহন করে চলে গোড়লি। তাই তো একটা বয়সের পর থেকে গোড়ালির চোট পাওয়ার বা অন্য কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আপনি কি চান এমনটা আপনার সঙ্গেও ঘটুক? উত্তর যদি না হয়, তাহলে বন্ধু নিয়মিত দৌড়াতে হবে। কারণ দৌড়নোর সময় শরীরের এই বিশেষ অংশে বোন মাস বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে পেশীর কর্মক্ষমতাও বাড়ায়। ফলে গোড়ালির সচলতা এতটা বেড়ে যায় যে একটু বেশি বয়সে গিয়ে গোড়ালি সম্পর্কিত কোনও রোগ হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৪. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: সাইকোনমিক বুলেটিন অ্যান্ড রিভিউ পত্রিকায় এই সম্পর্কিত প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস করলে মস্তিষ্কের অন্দরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ এতটা বেড়ে যায় যে ব্রেনের উপর বয়সের ছাপ পরতেই পারে না। সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে। এবার বুঝেছেন তো নিয়মিত দৌড়ালে কতটা উপকার পাওয়া যায়।

৫. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতে দৌড়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই শরীরচর্চাটি করার সময় দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, চিকিৎসকেরা এমনটাও বলে থাকেন যে যারা ইতিমধ্যেই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও যদি নিয়মিত কিছু সময় দৌড়াতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার মেলে।

৬. আয়ু বাড়ে: যেমনটা আপনারা জেনেই গেছেন যে নিয়মিত দৌড়ালে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরর প্রতি অংশের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ুও বাড়ে। তাই যত দিনই বাঁচুন না কেন, সুস্থভাবে যদি বাঁচতে চান, তাহলে রোজের রুটিনে কিছুটা সময় দৌড়াতে ব্যয় করতে ভুলবেন না যেন!

৭. আর্থ্রাইটিস মতো রোগ দূরে থাকে: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কারণে আমাদের জয়েন্ট দুর্বল হতে শুরু করে। যে কারণে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতিতে একটা জিনিসই সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে। কী সেই জিনিস? তেমন কিছু না প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট দৌড়াতে হবে। তাহলেই দেখবেন জেয়েন্টের সচলতা এতটা বেড়ে যাবে যে কোনও ধরনের হাড়ের রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।

Random Post