নিয়মিত বেদানা খাওয়া উচিত কি?


বলেন কী মশাই! এমন প্রশ্ন ভুলেও মনে আনবেন না। কারণ বিজ্ঞান বলছে সুস্বাদু এই ফলটিকে যদি রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন, তাহলে কোনও দিন হাসপাতালের মুখে দেখতে হয় না। কেন জানেন...? অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-টিউমার প্রপাটিজে পরিপূর্ণ এই ফলটি প্রতিদিন খাওয়া শুরু করলে দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকতেও বাধ্য হয়। বেদানা আদৌ কতটা উপকারি, এই উত্তর জানতে নানা সময় নানা গবেষণা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই রক্তিম ফলটির অন্দরে থাকা নানাবিধ উপকারি উপাদান সারা শরীরে অক্সিডেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে ত্বককে সুন্দর করে তুলতেও সাহায্য় করে। তবে এখানেই শেষ নয়, আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন অনুসারে নিয়মিত বেদান খাওয়া শুরু করলে...

১. নানাবিধ পেটের রোগ দূর হয়: শীত মানেই মাত্রা ছাড়া খাওয়া-দাওয়া। আর এমনটা করতে গিয়ে কি পেট ছেড়েছে? তাহলে বন্ধু এক্ষুনি অল্প করে বেদানা খেয়ে ফেলুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। কারণ বেদান অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান স্টমাকের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে তাকে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, বেদানার পাতা দিয়ে বানানো চা খেলেও এক্ষেত্রে দারুন উপকারি পাওয়া যায়।

২. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে রোজের ডায়েটে এই ফলটিকে রাখলে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে কমে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও। প্রসঙ্গত, বেদানার শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও নানাভাবে হার্টের খেয়াল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে: বেদানায় ফ্লেবোনয়েড নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তে উপস্থিত ক্যান্সার সৃষ্টিকারি টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে কোনও ভাবেই দেহের অন্দের ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূরে রাখতেও এই ফলটি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

৪. দাঁতের দেখভালে কাজে আসে: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র মুখ গহ্বরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে ক্যাভিটির মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

৫. জয়েন্টের সচলতা বাড়ায়: শরীরে যখন ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে তখন এমন কিছু ক্ষতিকর এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায় যে জয়েন্টের সচলতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হাড় এত মাত্রায় দুর্বল হয়ে পরে যে অস্টিওআর্থ্রাইটিস মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু বেদানা নানাভাবে কাজে আসে। কীভাবে? যে এনজাইমের কারণে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে, তার ক্ষরণ কমিয়ে দিয়ে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়: কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ি আমাদের দেশে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে বেদানা খাওয়ারও প্রয়োজন বেড়েছে অনেক মাত্রায়। কারণ এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো ছোট থেকেই মেয়েদের নিয়মিত বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৭. ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: পরিবারে কি এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে? উত্তর যদি হ্য়াঁ হয়ে থাকে, তাহলে বন্ধু আজ থেকেই বেদানা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন আপনার জীবনকালে কখনও ডায়াবেটিস আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না। কারণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

Random Post