নিয়মিত হলুদ খেলে কমবে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা!

পেনসিওনের ডিনেকে ফর্গুসন। ৬৭ বছরের এই মহিলা টানা ৫ বছর ধরে প্রতিদিন হলুদ খেয়ে গিয়েছিলেন। আর এই কারণে তার শরীরের কি অবস্থা হয়েছিল জানেন? পেনসিওনের দুরারোগ্য মেলানোমা ক্যান্সারে ভুগছিলেন। রোগের প্রসার এত দ্রুত ঘটছিল যে তাঁকে কোমোথেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। আর ঠিক সেই সময়ই কোনওভাবে হলুদের গুণাগুণসম্পর্কে জানতে পারেন ষাটোর্ধ্ব এই মহিলা। সেই শুরু। তারপর থেকে টানা পাঁচ বছর ক্রমাগত হলুদ খেয়ে গেছেন পেনসিওনের। আর সেই কারণে আজ তিনি ক্যান্সারকে হারিয়ে একবারে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। এক সময় যেখানে মনে হয়েছিস তিনি মৃত্যুর একেবারে দোড়গোড়ায়। সেখানে ক্যান্সারের মতো রোগকে হারিয়ে পেনসিওনের আজ বিজয়ী। আর তার জয়ের পিছেন বিশেষ হলুদের ভূমিকাকে কখনও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত, হলুদে কর্কিউমিন নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানব শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে ক্যান্সার রোগের উপশম ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে পুনরায় যাতে ক্যান্সার সেল জন্ম নিয়ে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। তবে হলুদ যে কেবল ক্যান্সার রোগকেই দূরে রাখে এমন নয়! নানা রোগ সারাতে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কাঁচা হলুদের ব্যবহার কয়েক হাজার বছর ধরেই হয়ে আসছিল। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে এই বিষয়ে কোনও উল্লেখ ছিল না যে আদৌ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যা লেখা রয়েছে তা সত্যি কিনা। তাই তো এই বিষয়ে শুরু হয়েছিল নানা গবেষণা। আর তাতে যা জানতে পারা গেছে, তা বাস্তবিকই নজর কারা। হলুদের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে গবেষকরা জানতে পেরেছেন এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে ঠাসা রয়েছে একাধিক উপকারি উপাদান। যেমন- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রপাটিজ, যা যে কোনও ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজের মতো আরও বেশ কিছু উপকারি উপাদান। তাই নিয়মিত হলুদ খেলে শরীরের যে নানাবিধ উপকার হয়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গত, নিয়মিত হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল...

১. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়: খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও ত্বকের উপর তার ছাপ যেন না পারে, এমনটাই কি চান? তাহলে তো বন্ধু নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। কারণ হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ত্বকের অন্দরে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিন উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, বায়ু দূষণের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি আটকাতেও হলুদের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

২.ব্যথা কমায়: হলদে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যে কোনও ধরনের ব্যথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস গরম দুধে পরিমাণ মতে হলুদ মিশিয়ে খেয়ে ফেললেই যন্ত্রণার খেল খতম। তাই এবার থেকে কোনও কারণে বডি পেন হলেই হালদি দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। এক্ষেত্রে আরেকভাবেও হলুদকে কাজে লাগাতে পারেন। শরীরের যে অংশ ব্যথা হচ্ছে, সেখানে হলুদের পেস্ট অল্প করে লাগিয়ে দেবেন। তাহলেও দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

৩. একাধিক পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে: কার্কিউমিন যে শুধু হজম ক্ষমতার উন্নতিতেই কাজে লাগে, এমন নয়। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বল সহ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই পেটের রোগের খপ্পর থেকে দূরে থাকতে হলে কাঁচা হলুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভুলবেন না যেন! প্রসঙ্গত, স্টমাক আলসারের মতো রোগ সারাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: বাঙালি মানেই খাওয়া-দাওয়ায় কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন অবস্থায় বদ-হজম হওয়াটা বেজায় স্বাভাবিক ঘটনা। তাই তো হে খাদ্যরসিক বাঙালি নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বেজায় উপকার পাবেন। কারণ হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন নামক একটি উপাদান হজমে সহায়ক পাচর রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম প্রক্রিয়া এতটা সুন্দরভাবে হতে থাকে যে বদহজম ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

৫. দেহের অন্দরে প্রদাহ কমায়: নানা কারণে আমাদের শরীরে অন্দরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর ইনফ্লেমেশন যদি একবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলেই কেলো। কারণ সেক্ষেত্রে নানাবিধ রোগের প্রকোপ মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। আর সব থেকে ভয়ের বিষয় হল শরীরের প্রদাহের মাত্রা বাড়ছে কিনা সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। এই কারণেই তো প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ হলুদের অন্দরে ঠাসা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে আর্থ্রাইটিস এবং চোখের ইনফেকশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে: হাত-পা কেটে গেলে আমরা অয়েন্টমেন্ট খুঁজতে বেরিয়ে পরি। এবার থেকে এমনটা না করে অল্প করে হলুদ নিয়ে তা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেবেন। তাহলেই দেখবেন কেল্লাফতে! আসলে হলুদের অন্দরে থাকা কার্কিউমিন হল এক ধরনের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ইনফেকশনের আশঙ্কাও কমায়।

৭. ওজন কমায়: হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরও নানাভাবে এই মশলাটি নিজের খেল দেখিয়ে থাকে। যেমন ধরুন শরীরে উপস্থিত ফ্যাট সেলেদের বার্ন করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলুদের অন্দরে উপস্থিত নানা উপকারি উপাদান নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই নতুন বছরে যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেতে ভুলবেন না যেন!

Random Post