নিয়মিত চকোলেট খেলে শরীরের কত উপকার হয় জানা আছে?


ভ্যালেন্টাইন ডে-এর ঠিক ৫ দিন আগে চকোলেট ডে সেলিব্রেশন করা হয় কেন জানেন? না, ঠিক জানি না তো? আসলে কী জানেন ১৪ তারিখ প্রেমিকাদের মুখ থেকে "না" শোনার পর কোনও রোমিও যাতে হার্ট অ্যাটাকের শিকার না হন, তা সুনিশ্চিত করতেই এই বিশেষ দিনটি উৎযাপন করা হয়ে থাকে। মানে! চকোলেট খাওয়ার সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের কী সম্পর্ক মশাই?

সম্পর্কটা কিন্তু বেশ গভীর। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত চকোলেট খাওয়া শুরু করলে হার্টের ক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

আবোল-তাবোল বোকছেন না তো মশাই! কারণ ইন্টারনেট বলছে কোনও একটা বিশেষ দিনকে চকোলেট ডে হিসেবে সেলিব্রেট করার পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। একেবারে ঠিক বলেছেন পাঠক বন্ধু! আসলে কী জানেন একটু মজা করার জন্যই কথাটা বলেছিলান। আদতে চকোলেটের গুণাগুণ নিয়ে জানানোটাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। আর আজ যেহেতু চকোলেট ডে, তাই সুযোগটা হাত ছাড়া করতেও মন চাইছিল না। তবে একথা ঠিক যে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাস্তবিকই চকোলেট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে একাধিক মারণ রোগও দূরে রাখতেও এই সুস্বাদু খাবারটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন...
 
১. স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে:

প্রায় ৪৪,৪৮৯ জনের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত অল্প করে চকোলেট খাওয়া শুরু করলে স্ট্রোকের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২২ শতাংশ কমে যায়। প্রসঙ্গত, জার্নাল হেলথে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যদি ১০০ গ্রাম করে চকোলেট খাওয়া যায়, তাহলে শুধু স্ট্রোক নয়, কমে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও।
 
২. ব্রেন ফাংশনের উন্নতি ঘঠে:

বেশি মাত্রায় কোকো দিয়ে বানানো চকোলেট খেলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে কগনেটিভ ফাংশনের উন্নতি ঘটার কারণে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘঠে। আসলে কোকোতে উপস্থিত ক্যাফিন এবং থিয়োব্রোমাইন এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধক:

ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের অন্দরে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকর টক্সিকদের টেনে টেনে দেহের বাইরে নিয়ে আসে। ফলে টক্সিক উপাদানের প্রভাবে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। প্রসঙ্গত, ডার্ক টকোলেটে রয়েছে পলিফেনল, ফ্লেবানল, ক্য়াটাচিন সহ একাধিক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৪. ডায়াবেটিস রোগকে দূরে থাকে:

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব চকোলেটে কোকোর মাত্রা বেশি থাকে, এমন চকোলেট খেলে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না। আসলে কোকোতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা বিটা সেলের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ইনসুলের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ডায়াবেটিস ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
 
৫. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখে গেছে নিয়মিত ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। অন্যদিকে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে হ্রাস পায়। তাই পরিবারে যদি হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে সময় থাকতে থাকতে ছোট বেলার মতো চকোলেটের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান, দেখবেন উপকার পাবেন।
 
৬. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়:

বেশি মাত্রায় কোকো দিয়ে বানানো ১০০ গ্রাম ডার্ক চকোলেটে প্রায় ১১ গ্রাম ফাইবার, দিনের চাহিদার ৬৭ শতাংশ আয়রন, দিনের চাহিদার ৫৮ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, দৈনিক চাহিদার ৮৯ শতাংশ কপার এবং প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম রয়েছে। এই সবকটি উপাদান শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই তো প্রতিদিন কম করে ১০০ গ্রাম করে ডার্ক চকোলেট খেলে শরীর নিয়ে ভাবার আর কোনও প্রয়োজনই পরে না।
 
৭. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে:

চকোলেটে ফ্লেভোনল নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা এন্ডোথেলিয়াম, মানে আর্টারির আবরণে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। এই গ্যাসটি আর্টারির স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়াতেও ডার্ক চকোলেট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৮. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ধীরে ধীরে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের উপর অতি বেগুনি রশ্মীর মারাত্মক প্রভাব পরার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই স্কিনকে যদি দীর্ঘদিন সুন্দর রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত ডার্ক চকোলেট খেতে ভুলবেন না যেন! আর যদি ডার্ক চকোলেট সিরাপ মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই।

Random Post