নিয়মিত ব্রকলি এবং বাঁধাকোপি খাওয়ার পরামর্শ কেন দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা?

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রতিদিনের ডায়েটে এই দুটি সবজিকে অন্তর্ভুক্ত করলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে ক্রসিফেরাস পরিবারের অন্তর্গত এই দুই সবজির শরীরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, গত এক দশকে আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বেড়েছে, তাতে খাবার প্লেটে ব্রকলি এবং বাঁধাকোপি থাকা যে মাস্ট, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই!

প্রতিদিন বাঁধাকোপি খাওয়া শুরু করলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল...

১. শরীর থেকে টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়:

বাঁধাকোপির রসে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং সি আমাদের শরীরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন কোষেদের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়, তেমনি ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। প্রসঙ্গত, হার্টকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও এই দুই ভিটামিন দুটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো বাঁধাকোপির রসের উপকারিতা কতটা।

২. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়:

বাঁধাকোপিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে, যেমন ধরুন- ভিটামিন সি, এ,বি১,বি২,বি৬,ই এবং কে। প্রসঙ্গত, এই সবকটি ভিটামিনই কিন্তু শরীরে নানা উপকারে লেগে থাকে। সেই সঙ্গে রোগ ভোগের আশঙ্কা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, বাঁধকোপির অন্দরে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

শরীরকে নানাবিধ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের শরীরের অন্দরে বেশি কিছু সৈনিক রাত্রি দিন কাজ করে চলে। এরা যখন কাজ করতে করতে দুর্বল হয়ে পরে, তখনই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানা রোগ। আপনি কি চান, আপনার সৈনিকেরও এমন দুর্বল হয়ে পরুক। উত্তর যদি না হয়, তাহলে আজ থেকেই বাঁধাকোপির রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপদানাটি ইমিউন সিস্টেমকে এত মাত্রায় শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে কমে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

৪. চোখের ক্ষমতা বাড়ে:

এই সবজিটিতে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর রেটিনার ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করে। ফলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে ছানির সমস্য়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যায় কমে। তাই যাদের দিনের বেশির বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়, তাদের রোজের ডায়েটে বাঁধাকোপির থাকা মাস্ট!

৫. লিভার ফাংশনের উন্নতি ঘটে:

শরীরকে চাঙ্গা রাখতে যে যে অঙ্গগুলির কোনও বিকল্প হয় না, লিভার তাদের অন্যতম। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা লিভারের একটু বেশি মাত্রায় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই কাজটি যাতে আপনি ঠিক ঠিক মতো করতে পারেন, তার জন্যই তো বাঁধাকোপি খাওয়া জরুরি। কারণ এই সবজিটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে ইনডোল-৩ কার্বোনাইল নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা শরীরকে বিষ মুক্ত করার পাশাপাশি লিভার ফাংশনের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:

অতিরিক্ত ওজন আজ অভিশাপের সমান। কারণটা খুব সহজ! মাত্রাতিরিক্ত ওজন মানেই তার লেজুর হবে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের মতো মারণ ব্যাধি। আর এমনটা হলে জীবনে একেবারেই শান্তি থাকবে না, তা কি আর বলে দিতে হবে। তাই কোমরের মাপ যদি বাড়তে শুরু করে, তাহলে আজ থেকেই বাঁধাকোপি দিয়ে বানানো নানা পদ রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দ্রুত ওজন কমে যাবে। আসলে নিয়মিত এই সবজিটি খেলে ইনটেস্টটাইনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। আর এমনটা হলে মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

এবার ব্রকলির পালা। এই সবজিকে রোজের সঙ্গী বানালে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময় লাগে না। কারণ...

১. সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা মেলে:

গ্লকোরাফেনিন নামক একটি শক্তিশালী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে ব্রকলির অন্দরে, যা আমাদের ত্বকের উপর এমন একটি বর্ম তৈরি করে ফেলে যে অতি বেগুনি রশ্মির কোনও প্রভাবই পরে না স্কিনের উপর। প্রসঙ্গত, বায়ু দূষণের কারণে ওজন স্তর ফুঁটো হতে শুরু করে করেছে, যে কারণে অতির মাত্রায় আলট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রবেশ ঘটছে বায়ু মন্ডলে। এমন পরস্থিতিতে ব্রকলির মতো সবজি খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

২.নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে:

গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় কি জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই এই সবজিটি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। কারণ ব্রকলিতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার একদিকে যেমন পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তেমনি কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কামতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, ব্রকলির মধ্যে আরেকটি খনিজ থাকে, যা স্টমাক ফাংশনের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। কোন খনিজের কথা বলছি তাই ভাবছেন তো? খনিজটি নাম হল ম্যাগনেসিয়াম।

৩. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি ব্রকলিতে উপস্থিত ফাইবার, বিটা-ক্যারোটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং উপকারি ভিটামিনেরা রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে ব্লাড প্রেসারকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, এই সবজিটিতে থাকা পটাশিয়ামও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খনিজটি সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্টের পাশপাশি অন্যান্য ভাইটাল অর্গেনেদের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।

৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর হয়:

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়, তেমনি ক্যান্সারের মতো একাধিক জোটিল রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Random Post