এর গুণ জানলে দেখবেন আপনার রোজের পাতে থাকবেই থাকবে মাশরুম!!!

বাঙালিরা খায় না বটে! তবে যদি খাওয়া শুরু করেন তাহলে যে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না, তা হলফ করে বলতে পারি। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি মাশরুমিকে হালকা ফ্রাই করে বানানো কারি বা স্যুপ খাওয়া শুরু করলে শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে এক নয়, একাধিক রোগ দূরে পালায়। যেমন ধরুন...

১. প্রদাহের মাত্রা কমে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ২-৩ দিন যদি নানা পদে মাশরুমকে ব্যবহার করা যায়, তাহলে শরীরের অন্দরে এর্গোথিয়েনাইন নামক একটি উপাদানের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে, যার প্রভাবে সারা শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি নানাবিধ রোগ ঘারে চেপে বসার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

২. শরীর এবং ত্বকের বয়স কমে:
২০১৭ সালে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মাশরুমের অন্দরে রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে শরীর এবং ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, ৩০ পেরনের পরেও যদি চান ত্বক ষোড়শীর মতোই থাকুক, তাহলে রোজের ডেয়েটে মাশরুমকে থাকতে ভুলবেন না যেন!

৩. আয়রনের ঘাটতি মেটে:
লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে এবং শরীরের সচলতা বাড়াতে আয়রন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো নিয়মিত মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এতে উপস্থিত কপার আয়রনের শোষণ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে এই খনিজটির ঘাটতি হাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৪. ক্যান্সারের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:
মাশরুমের অন্দরে বিটা-গ্লকেন এবং লাইনোলিক অ্যাসিড নামে দুটি উপাদান থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর কার্সিনোজেনিক গ্রোথ হতে দেয় না। সেই সঙ্গে শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদেরও বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছেও আসতে পারে না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বেড়েছে, তাতে মাশরুমের মতো অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক খাবার খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

৫. দাঁত-চুল-নখ চাঙ্গা থাকে:
হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে, চুল এবং নখের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং শরীরকে বিষ মুক্ত রাখতে এই উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর সেলেনিয়াম সবথেকে বেশি মাত্রায় থাকে মাশরুমে। এবার বুঝেছেন তো এই প্রকৃতিক উপাদনটি দিয়ে বানানো সুপ খাওয়ার প্রয়োজন কতটা!

৬. অ্যানিমিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখে:
শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমতে শুরু করলে লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনে বাঁধা আসতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যানিমিয়ার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মাশরুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি আয়রনে ঠাসা। ফলে অ্যানিমিক রোগীদের নিয়ম করে মাশরুম খাওয়ালে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।

৭. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরকে চালাতে যে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে, তার বেশিরভাগই মজুত থাকে মাশরুমে। যেমন ভিটামিন ডি-এর কথাই ধরুন না। এই উপাদানটি শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

৮.ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে:
নানা কারণে রক্তচাপ কি খুব ওঠানামা করছে? তাহলে তো মাশাই মাশরুমের সঙ্গই আপনার বন্ধুত্ব করার সময় এসে গেছে। কারণ মাশরুমে উপস্থিত পটাশিয়াম, শরীরের অন্দরে সোডিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে:
পরিবারে সুগার রোগের ইতিহাস আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে রোজের ডায়েটে মাশরুমের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! কারণ এতে থাকা প্রকৃতিক ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তবে এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাশরুম, লিভার, প্যানক্রিয়াস এবং অন্যান্য এন্ডোক্রনিক গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১০. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
মাশরুমের শরীরে মজুত থাকা ফাইবার এবং উপকারি এনজাইম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ধীরে ধীরে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল মাত্রা কমতে শুরু করে। অন্যদিকে বাড়তে শুরু করে উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কাও।

১১. হাড়ের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে:
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি খেলে ধীরে ধীরে হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই তো বুড়ো বয়সে গিয়ে যদি জয়েন্টের ব্যথায় কাবু হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই মাশরুমের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।

১২. ইমিউনিটি আরও শক্তপোক্ত হয়:
আর্গোথিয়োনাইন নামক বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত রয়েছে মাশরুমে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি ইমিউনিটি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেলে কোনও রোগের পক্ষেই আর শরীরকে আক্রমণ করা সম্ভব হয় না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়। প্রসঙ্গত, মাশরুমের মধ্যে থাকা প্রকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Random Post