৭০০০ বছর আগে জন্ম নেওয়া আলু নামক সবজিটি কি সত্যিই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক?


এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষই আলু সম্পর্কে নেতিবাচর ধরণা পোষণ করে থাকেন। কারণ তাদের মনে হয় এই সবজিটি খেলে নাকি শরীরের ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, দেহের ওজনও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার প্রভাবে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের মতো মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। কিন্তু মজার বিষয় কী জানেন এই ধরণা একেবারে ভুল। কারণ...

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-বি৬, পটাশিয়াম, কপার, ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ফাইবার এবং প্যানটোথেনিক অ্যাসিড। সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড, ফ্লেবোনয়েড, ক্য়ালসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে তার একটা বিষয়ে স্পষ্ট ধরণা করে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। তা হল ভাজা আলু শরীরের পক্ষে একেবারেই ভায় নয়। কারণ এমন খাবার বেশি মাত্রা খেলে বাস্তবিকই কোলেস্টেরল, হার্ট ডিজিজ এবং বাকি সব লাইফ স্টাইল ডিজিজের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সেই ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে। কিন্তু তাই বলে আলুকে খারাপ বলা কিন্তু বোকামি হবে। কারণ সেদ্ধ করে যদি এই সবজিটি খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের কোনও খারাপই হয় না, বরং নানা রকম উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...

১. দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমে:
আলুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, বি৬ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে প্রদাহের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট পেনের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
   

২. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত এমন কিছু উপাদানের জন্ম হয়, যা ব্লাড ভেসেল এবং হার্টের উপর কু-প্রভাব ফেলে। এই ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের কর্মক্ষমতা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় আলুতে উপস্থিত ভিটামিন বি৬ এবং আরও সব উপকারি উপাদান। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের হার্ট ডিজিজ এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমাতেও এই ভিটামিনটি দারুন কাজে লাগে।
   

৩. ফাইবারের ঘাটতি মেটে:
মাঝারি মাপের একটা আলুতে প্রায় ২ গ্রামের কাছকাছি ফাইবার থাকে, যা সারা দিনের মোট ফাইবারের চাহিদার প্রায় ৮ শতাংশ পূরণ করে থাকে। প্রসঙ্গত, ডায়াটারি ফাইবার একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে নানা ধরনের পেটের রোগের প্রকোপ কমাতে, বাজে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কোলন ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানটি সাহায্য় করে। তাই তো শরীরে যাতে কোনও সময়ই ফাইবারের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আলু আপনাকে কিন্তু ব্যাপক ভাবে সাহায্য করতে পারে।
   

৪. আলু এবং উচ্চ রক্তচাপ:
চিকিৎসকেরা বলেন, নুন বা সোডিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবার খেলে ব্লাড প্রেসার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আলুতে যে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব কম থাকে, তাই এই সবজিটি খেলে যে ব্লাড প্রেসার যে বাড়ে না, তা বলাই বাহুল্য! বরং আলুতে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং তিতোয়ামিনেস নামক উপাদান, ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখেতে বিশেষ ভুমিকা নিয়ে থাকে। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে সব দিক থেকেই আলু প্রেসারের রোগীদের জন্য নিরাপদ।


৫. কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
আলুতে উপস্থিত ভিটামিন-বি৬ কোষের গঠনে সারাক্ষণ কাজ করে চলে। সেই সঙ্গে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং নিউক্লেয়িক অ্যাসিডের সিন্থেসিসের জন্যও ভিটামিন বি৬-এর প্রয়োজন পরে। তাই তো একথা বলতেই হয় যে শরীরকে সার্বিকভাবে সুস্থ এবং চাঙ্গা রাখতে আলুর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
   

৬. ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটে:
নিয়মিত আলু খেলে শরীরে এই বিশেষ উপাদানটি ঘাটতি দূর হয়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে আর্টারিতে ময়লা জমারও সুযোগ পায় না। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এবার বুঝেছেন তো কেন আলুকে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় বেশ উপরের দিকে জায়গা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা!
   

৭. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে:
নার্ভাস সিস্টেম যাতে এক নার্ভ থেকে আরেক নার্ভে ঠিক মতো বার্তা পৌছে দিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখে ভিটামিন বি৬। সেই সঙ্গে ব্রেন সেলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এই ভিটামিনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একথা তো জেনেই গেছেন যে আলুতে এই বিশেষ ধরনের ভিটামিনটি প্রচুর পরিমাণে থাকে। ফলে আলু খেলে ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে যে সময় লাগে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, আলুতে উপস্থিত ভিটামিন বি ৬, সেরাটোনিন নামে একটি উপাদানের ঘাটতি মেটাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেরাটোনিনের অভাবের কারণে মানসিক অবসাদের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানেই শেষ নয়, ভাল রকম ঘুম হওয়ার জন্য মেলাটোনিন নামে এক ধরনের উপাদানের প্রয়োজন পরে। এটির ঘাটতি মেটাতেও আলু বিশেষ ভূমিকা নেয়।

   
৮. ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না:
অনেকেই এমনটা বিশ্বাস করেন যে আলু খেলেই নাকি ওজন বাড়ে। কিন্তু জেনে রাখুন বন্ধুরা এই এই ধরণাটি একেবারেই ঠিক নয়। কারণ শুধুমাত্র আলু খেলে ওজন বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। কিন্তু কেউ যদি কিলো কিলো আলু ভাজা খান বা আলু সেদ্ধর সঙ্গে মাখন দিয়ে খান, তাহলে তো ওজন বাড়বেই। প্রসঙ্গত, একটা মাঝারি মাপের আলুতে প্রায় ১৬৩ ক্যালোরি থাকে। তাই তো আলুর সঙ্গে এমন কোনও খাবার খাওয়া উচিত নয়, যাতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি রয়েছে। আর এমনটা যদি না করেন, তাহলে শরীরে ক্যালোরি জমতে শুরু করবে। ফলে ওজন বাড়বে। তাই হিসেব করে খাবার খেতে হবে। যেমন ধরুন অনেকেই আলু ভাজার সঙ্গে বার্গার খেয়ে থাকেন। এই দুটি খাবার এক সঙ্গে খেলে শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বৃদ্ধি পাবেই পাবে। ফলে ওজনও বাড়বে। তবে আমরা, মানে বাঙালিরা যেভাবে আলুকে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করে থাকি, তাতে ওজন বাড়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা থাকে না।
   

৯. কোলেস্টেরল বাড়ে না বরং কমে:
এই সবজিটিতে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা খুব রয়েছে। তাই আলু খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অথবা হার্টের রোগ হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। বরং একথাও বলা যেতে পারে যে যাদের হার্টের রোগ রয়েছে তারা ইচ্ছা হলে দিনে কয়েক টুকরো সেদ্ধ আলু খেতেই পারেন। তাতে ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। বরং হর্টারে উপকারই হবে।

Random Post