নিয়মিত কাঁচা টমাটো অথবা টমাটোর রস খাওয়া শুরু করলে কী কী উপকার পাওয়া যেতে পারে জানা আছে?

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই সবজিটিতে উপস্থিত লাইকোপেন এবং বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের যেমন বের করে দেয়, তেমনি স্ট্রেস লেভেলও দ্রুত কমিয়ে ফেলে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। এখানেই শেষ নয়, টমাটোতে উপস্থিত ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামও নানাভাবে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বলি বন্ধু, সুস্থ জীবন পেতে আজ থেকেই কাঁচা অথবা টমাটো রস খাওয়া শুরু করুন। প্রসঙ্গত, এই সবজিটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি মেলে, সেগুলি হল...

১. শরীরকে বিষমুক্ত করে: টমাটোয় উপস্থিত সালফার, দেহে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন লিভার এবং কিডনিতে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়, তেমনি এই দুই অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ছোট-বড় রোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। তাই তো বলি বন্ধু, দীর্ঘ দিন যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চান, তাহলে নিয়মিত কোনও না কোনও ভাবে টমাটো খেতে ভুলবেন না যেন!

২. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত একটা করে কাঁচা টমাটো অথবা এক গ্লাস টমাটোর রস খেলে শরীরের অন্দরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। আর পেট ভরা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার পরিমাণও কমে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, দূর্গা পুজোর আগে যদি অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলার স্বপ্ন পূরণ করতে হয়, তাহলে রোজের ডায়েটে টমাটোর রসকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!

৩. ত্বকের বয়স কমে: আপনার বয়স কি ৩০ পেরিয়েছে? তাহলে প্রতিদিন টমাটোর রস লাগানো শুরু করুন মুখে। কারণ এই বয়সের পর থেকেই নানা কারণে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে সৌন্দর্য কমে চোখে পরার মতো। কিন্তু যদি টমাটোকে উদ্ধার কাজে লাগান, তাহলে ত্বকের এমন খারাপ অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ত্বকের অন্দরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে স্কিনের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হওয়ার কারণে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। ফলে বলিরেখা গায়েব হতে সময় লাগে না।

৪. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকলে হার্টের কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না! তাই তো বলি বন্ধু যারা বেজায় অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করে থাকেন, তারা যদি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে না চান, তাহলে রোজের ডায়েটে কাঁচা টমাটোকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এই সবজিটির অন্দরে উপস্থিত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করেই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

৫.মৃত কোষের স্তরকে সরিয়ে ফেলে: পরিমাণ মতো টমাটোর পেস্টের সঙ্গে ১ চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করুন। এমনটা প্রতিদিন করলে দেখবেন ত্বকের উপরে জমে তাকা মৃত কোষের স্তর সরে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: টমাটোয় উপস্থিত লাইকোপেন, লুটেন এবং বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ছানির মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭. ত্বকের অন্দরে জমে থাকা ময়লা ধুয়ে যায়: একথা নিশ্চয় জানা আছে যে পরিবেশে উপস্থিত ডাস্ট পার্টিকালরা প্রতিনিয়ত ত্বকের অন্দরে প্রবেশ করে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। তাই তো দিনের শেষে সবাইকেই ভাল করে মুখ ধুয়ে শুতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যাটা হল বাজার চলতি বেশিরভাগ ফেসওয়াশ জেলই এই কাজটি ঠিক মতো করে উঠতে পারে না। ফলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমন অবস্থায় ত্বককে বাঁচাতে যদি অ্যাভোকাডোর সঙ্গে টমাটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার পাওয়া মেলে। আসলে এই দুই প্রকৃতিক উপাদান একদিকে যেমন ত্বকের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। ফলে সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো।

৮. হাড় শক্তপোক্ত হয়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমাটোর অন্দরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে হাড় শক্তপোক্ত হয়ে উঠতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন বন্ধু, নিয়মিত কেন টমাটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা!


৯. সূর্যের খারাপ প্রভাব থেকে স্কিনকে বাঁচায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাড়ির বাইরে বেরনোর আগে যদি অল্প করে টমাটোর রস মুখে লাগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে অতি বেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে তাপ প্রবাহের কারণে ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। আসলে টমাটোর অন্দরে থাকা লাইকোপেন নামক একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।


১০. ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি দূর হয়: নিয়মিত ২ টো করে কাঁচা টমাটো খাওয়া শুরু করলে ভিটামিনের মোট চাহিদার প্রায় সিংহভাগই মিটে যায়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় খনিজের ঘাটতিও মিটতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, একাধিক রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

১১. ক্যান্সারের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না: টমাটোতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে প্রতিদিন যদি ১-২ টো করে কাঁচা টমাটো অথবা রস করে খাওয়া যায়, তাহলে এই মারণ রোগ নিয়ে আর চিন্তার থাকতে হবে না, এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের। বিশেষত প্রস্টেট এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারকে দূর রাখতে টমাটোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

১২. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে: ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং কোলিন হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই সবকটি উপাদানই প্রচুর মাত্রায় রয়েছে টমাটোতে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে চান, তো রোজের ডায়েটে এই সবজিটিকে রাখতে ভুলবেন না যেন!



Random Post