প্রতিদিন এক গ্লাস করে বিট এবং গাজরের রস খাওয়া উচিত কেন জানা আছে কি?

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই দুই সবজিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত গাজর এবং বিটে উপস্থিত "ডিটক্সিফায়ার" শরীরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে দেহের অন্দরে বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা বেড়ে গিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকার, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নিয়মিত এক গ্লাস করে বিটের রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের যে যে উপকারগুলি হয়ে থাকে, সেগুলি হল...

১. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বিটরুট বা বিটের রস খেলে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হৃদপিন্ডের অন্দরে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবানও কমে। এই কারণেই তো যাদের পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের ৩০-এর পর থেকেই নিয়মিত বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

২.হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: বাড়ির বাইরে খেতে খেতে পাকস্থলি কাজ করা বন্ধ করে দিতে বসেছে। ফলে বাড়ছে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ? ফিকার নট! কাল থেকে এক গ্লাস করে বিট রুটের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন স্টমাক তার হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা ফিরে পাবে। ফলে হজম ক্ষমতা এমন বেড়ে যাবে যে অম্বল ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।

৩. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে: যেভাবে স্ট্রেস আমাদের ঘিরে ধরছে, তাতে রক্তের আর কী দোষ বলুন! রাগে-দুঃখে-হতাশায় সে ফুলে ফেঁপে উঠছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে রক্তচাপ। এমন অবস্থায় রক্তকে ঠান্ডা করতে পারে একমাত্র বিটের রক্তিম রস। আসলে রক্তের মতোই দেখতে এই রসটিতে রয়েছে নাইট্রেস, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. লিভার ফাংশনের উন্নতি ঘটে: প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, বিটেইন, ভিটামিন বি, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এই সবজিটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। কারণ সবকটি উপাদানই নানাভাবে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, লিভারের অন্দরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানেরা যাতে ঠিক মতো বেরিয়ে যেতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে বিটের অন্দরে থাকা বিটেইন এবং ফাইবার।

৫. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: মস্তিষ্কের সোমাটোমটোর কটেক্স অঞ্চলে অক্সিজেনেশানের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে ব্রেন নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়াতে বিটের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর একবার মস্তিষ্কের এই বিশেষ অংশটির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির বিকাশ ঘঠতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, বিটের অন্দরে থাকা নাইট্রেট শরীরে প্রবেশ করে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা ব্রেণের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বিটের শরীরে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।

৭. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়: গলা দিয়ে গড়িয়ে রসটা যখনই রক্তে মেশে অমনি সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে দেহের প্রতিটি অংশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ঘাটতি হতে থাকা ফিজিকাল এনার্জিও ফিরে আসে। শুধু তাই নয়, স্ট্রেসও কমতে থাকে। তাই এবার থেকে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত-অবশান্ত লাগলে ঝপ করে এক গ্লাস বিটের রস বানিয়ে খেয়ে ফেলবেন। দেখবেন নিমেষে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। বিটের গুণগান তো অনেক গাওয়া হল। এবার গাজরের পালা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রোজের ডায়েটে গাজরের রসকে জায়গা করে দিলে শরীরের নানা উপকার হয়। যেমন ধরুন...

১. ভিটামিন এ-এর ঘাটতি দূর হয়: গাজরে এতমাত্রায় ভিটামিন এ রয়েছে যে শরীরের অন্দরে এই ভিটামিনর চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বলি বন্ধু, যারা সারা দিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তারা যদি চোখকে সুস্থ রাখতে চান, তাহলে গাজরের রস খেতে ভুলবেন না যেন!

২. ত্বকের দাগ মিলিয়ে যায়: গাজরের অন্দরে উপস্থিত পটাশিয়াম, ত্বকের অন্দরে প্রবেশ করার পর কোষেদের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে মুখের যে কোনও দাগ মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্কিনের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরে আসে। ফলে সুন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো।

৩. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে: নিয়মিত গাজর খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা দেহে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৪. ব্রণর প্রকোপ কমে: সারা মুখ কি ব্রণয় ভরে গেছে? এমন অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? কোনও চিন্তা নেই! নিয়মিত গাজরের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই ব্রণর প্রকোপ একেবারে কমে যাবে। আসলে গাজরের অন্দরে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের অন্দরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানদের বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারাও মরতে শুরু করে। ফলে ব্রণর মতো ত্বকের সমস্যা বাগে আসতে সময় লাগে না।

৫. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে: শরীরকে যদি রোগ মুক্ত রাখতে হয়, তাহলে নিয়মিত এক গ্লাস করে গাজরের রস খেতে ভুলবেন না। কারণ এমনটা করলে শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হবে, সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। যার প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। শুধু তাই নয়, নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যাবে কমে।

৬. ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে: শরীর বলুন কী ত্বক, তার সৌন্দর্য নির্ভর করে বেশ কতগুলি উপাদানের উপর, যার অন্যতম হল ভিটামিন। তাই ত্বকের অন্দরে যাতে কোনও সময় এই উপাদনটির ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজে সাহায্য করতে পারে গাজর। কারণ এই সবজিটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, বিশেষত ভিটামিন এ, যা ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার মধ্যে দিয়ে স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Random Post