ভেজাল দুধ খেলে বাড়ে গর্ভপাতের আশঙ্কা!

সব থেকে পুষ্টিকর খাবারই আজকের ডেটে বিষে পরিণত হয়েছে। আর যেদিকে পরস্থিতি যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে দুধের জনপ্রিয়তা যে আরও কমবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দুধের গ্রহণযোগ্যতা কমার পিছনে তার মানের ঘাটতিকেই দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের সিংহভাগ দুধ বিক্রেতাই লাভের অঙ্ককে বাড়াতে দুধে এমন সব জিনিস মেশাচ্ছে, যে পুষ্টিকর এই পানীয়টি শরীরের কোনও উপকারে তো লাগছেই না, উল্টে মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে দুধের সঙ্গে মেশানো স্টার্চ, ডিটার্জেন্ট, ইউরিয়া, সিন্থেটিক মিল্ক এবং নানাবিধ কেমিকাল, যেমন- সোডিয়াম কার্বোনেট, ফর্মেলিন এবং অ্যামোনিয়াম সালফেট বাচ্চাদের শরীরে প্রবেশ করতে করতে নানাবিধ জটিল রোগকে ডেকে আনছে। শুধু তাই নয়, এমন ভেজাল দুধ খাওয়ার কারণে ভাবী মায়েদের গর্ভপাতের আশঙ্কাও বাড়ছে চোখে পরার মতো। তাই এখন থেকেই যদি সাবধান হাওয়া না য়ায়, তাহলে কিন্তু ভিষণ বিপদ! এখন প্রশ্ন হল, খালি চোখে কিভাবে বুঝবো যে দুধ কিনে আনা হয়েছে, তা ভেজাল কিনা? এই প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হয়েছে বাকি প্রবন্ধে। তাই তো সবারই এই সেখাটি পড়া মাস্ট! একথা ঠিক যে খালি চোখে কোন দুধটা ভাল, আর কোনটা খারাপ, সেটা বোঝা সম্ভব নয়। তাই তো ভেজাল দুধ চেনার বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। যাতে এবার থেকে দুধ খাওয়ার আগে এই পরীক্ষাগুলি করে দেখে নিতে পারেন যে দুধে কোনও অপুষ্টিকর উপাদান মেশানো রয়েছে কিনা। দা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাথোরিটি অব ইন্ডিয়া (এই এস এস এ আই) এইসব ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে মান্যতা দিয়েছে। তাই আর দেরি না করে নিজের এবং পরিবারের বাকি সদস্য়দের শরীরের কথা ভেবে এখনই জেনে নিন ভেজাল দুধ চেনার সহজ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে।

১: দুধকে পরিমাণে বাড়াতে এবং লাভের অঙ্ক আকাশ ছোঁয়া করতে একদল কুচক্রি আজকাল দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বনস্পতি বা ডালডা মিশিয়ে থাকেন। আপাত দৃষ্টিতে এই দুই উপাদান ক্ষতিকারক মনে না হলেও একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে বেশি মাত্রায় ডালডা বা বনস্পতি জাতীয় উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ডলডায় উপস্থিত ট্রান্স ফ্যাটের কারণে ব্রেস্ট এবং ইন্টেস্টাইনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই তো এই ধরণের ভেজাল দুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল ন। কিন্তু প্রশ্ন হল, বুঝবেন কীভাবে যে দুধে ডালডা বা ঐ জাতীয় কোনও উপাদান মেশানো আছে? একটা সহজ উপায় আছে বৈকি! ১ চামচ দুধ নিয়ে তাতে ২ চামচ হাইড্রোক্লরিক অ্যাসিড এবং ১ চামচ চিনি মেশান। কিছু সময় পরে যদি দেখেন মিশ্রনটি লাল রঙের হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন ঐ দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ডালডা মেশানো ছিল।

২: দুধকে অনেকক্ষণ তাজা রাখতে অনেকেই এতে ফরমালিন নামে একটি উপাদান মিশিয়ে থাকেন। কিন্তু কী পরিমাণে এই উপাদানটি মেশানো উচিত, তা অনেকেই জানেন না। ফলে বেশি মাত্রা ফরমনিল মিশিয়ে দুধের গুণাগুণকেই নষ্ট করে দেন অনেকে। শুধু তাই নয়, ফরমালিনের প্রভাবে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। যেমন- চোখ থেকে জল পরা, গলায় এবং নাকে জ্বালা করা, কাশি, মাথা ঘোরা, ত্বকে মারাত্মত জ্বালা ভাব প্রভৃতি। তাই তো এবার থেকে দুধ কেনার পরপরই দেখে নেবেন তাতে বেশি মাত্রায় এই উপাদানটি রয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে মাত্র ১০ এম এল দুধে ২-৩ চামচ সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে নিন। কিছু সময় পরে যদি দেখেন মিশ্রনটির উপরের দিকে নীল রঙের আংঠির মতো গোলাকার অবয়ব তৈরি হয়েছে তাহলে সেই দুধ খাওয়া একেবারেই খাওয়া চলবে না।

৩: পরিমাণ মতো দুধ একটা বাটিতে নিয়ে অল্প আঁচে কম করে ২-৩ ঘন্টা ধীরে ধীরে ফোটাতে থাকুন। এমনটা করলে দেখবেন, নিদির্ষ্ট সময়ের পর দুধটা আর তরল থাকবে না। সেটা খোয়া ক্ষীরে পরিণত হয়েছে। তখন যদি দেখেন ক্ষীরটা খুব শক্ত হয়ে গেছে, তাহলে বুঝবেন দুধটা ভেজাল ছিল। আর যদি দেখেন ক্ষীরটা একটু তেল তেলা মতন হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে সেই দুধে কোনও ভেজাল উপাদান মেশানো ছিল না।

৪: দুধে অনেকে নানা ধরনের স্টার্চও মিশিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ৫ এম এল দুধ নিয়ে তাতে ২ চামচ নুন ফেলে দেখুন তো দুধটা নীল রঙের হয়ে যাচ্ছে কিনা। যদি দেখেন এমনটা হচ্ছে, তাহলে মনে কোনও সন্দেহ রাখবেন যে ঐ দুধটা ভেজাল।

৫: আজকাল দুধে নানা ধরনের কেমিকেল, এমনকী সাবান মিশিয়েও দুধকে ঘন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই ধরনের দুধকে সাধারণত "ক্যামিকেল দুধ" বলে চিহ্নিত করে থাকেন চিকিৎসকেরা। এমন দুধ ফোটালেই হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। এবার থেকে তাই দুধ ফোটানোর সময় যদি দেখেন দুধের সাদা ভাব ধীরে ধীরে বদলে ফ্যাকাসে হলুদ রঙের হয়ে গেছে তাহলে ভুলেও সেটি মুখে তুলবেন না।

৬: দুধের পরিমাণ বাড়াতে বেশিরভাগই তাতে ইউরিয়া মিশিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করে জানেন? কারণ ইউরিয়া মেশানোর পর দুধের স্বাদে কোনও পরিবর্তন আসে না। তাই তো আমরা অনেকেই না বুঝে এমন ভেজাল দুধ বছরের পর বছর খেয়ে যাই। বুঝতেও পরি না যে আমাদের শরীরে কোনও পুষ্টি নয়, ঢুকছে হাজারো ভেজাল উপাদান। চিন্তা নেই এমন ভেজাল দুধকেও চিনে ফেলা সম্ভব। কীভাবে? এক চামচ দুধের সঙ্গে এক চামচ সোয়াবিন বা অরহর ডালের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রনটিকে ভাল ভাবে নারাতে থাকুন। ৫ মিনিট পরে তাতে লিটমাস কাগজ চুবিয়ে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে যাওয়ার পর যদি দেখেন মিশ্রনটি লাল থেকে নীল হয়ে যাচ্ছে। তাহলে বুঝবেন ঐ দুধে ইউরিয়া মেশানো রয়েছে।

৭: দুধে জলে মেশানো তো কোন কাল থেকে হয়ে আসছে। সে সম্পর্কে জানেন না এমন লোকের সংখ্যা নেহাতিই কম। আসলে জল শরীরের পক্ষে কোনও ভাবেই ক্ষতিকর নয়। তাই তো দুধে জল মেশানোর বিষয়ে সবাই জেনেও সেভাবে ভাবিত হন না। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রেও একটা উপায় রয়েছে যাকে কাজে লাগিয়ে জেনে যাওয়া সম্ভব দুধে আদৌ জল মেশানো হয়েছে কিনা। কীভাবে এমনটা সম্ভব? হাতের উপরে এক ড্রপ দুধ ফেলার পর যদি দেখেন দুধের ফোঁটাটা পেছনে রেখা তৈরি করে গড়িয়ে পরে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন সেই দুধে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ জল মেশানো হয়েছে। আর যদি উল্টো ঘটনা ঘটে, তাহলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। পরিসংখ্যান বলছে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে যে পরিমাণ দুধ প্রতিদিন বিক্রি করা হয় তার ৫০-৬৫ শতাংশই ভেজাল হয়। তাই এখন থেকেই সাবধান হন, না হলে কিন্তু ঘোর বিপদ!

Random Post