অলিভ অয়েল, সাদা তেল ছেড়ে নিয়মিত সরষের তেল খেতে কেন বলছেন চিকিৎসকেরা?

ধোঁয়া ওঠা সরষের তেলে ডুব খাচ্ছে একের পর এক ইলিশের পিস। আর মিনিটে তৈরি হয়ে যাচ্ছে ইলিশ ফ্রাই! তাতে এবার একটা কাঁচা লঙ্কা চিড়ে, খানিক সরষের তেলে মেখে ইলিশ তেল পরিবেশিত হচ্ছে গরম গরম ভাতের সঙ্গে। উফফ...অসাধারণ, কি তাই না! একেবারেই! এমন পদ যে বেজায় মুখরোচক, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! কিন্তু অনেকে যে বলছেন সরষের তেল খাওয়া উচিত নয়, তবে! এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে ঠিকই। তবে বিজ্ঞান কি বলছে সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে শরীর এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য সরষের তেলের কোনও বিকল্প প্রায় হয় না বললেই চলে। আর একথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মেনে নিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিন সরষের তেলে রান্না করা খাবার খেলে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন...

১. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সরষের তেলে উপস্থিত লাইনোলেনিক অ্যাসিড শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়াক আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত স্টমাক এবং কোলন ক্যান্সারকে দূরে রাখতে এই তেলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

২. শরীরকে রোগমুক্ত রাখে: আজও ঠাকুমা-দিদিমারা নাতি-নাতিনিরা ছোট থাকতে সরষের তেল মাখিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করে জানেন? কারণ ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এই তেলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৩. দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতা বাড়ে: বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে সপ্তাহে একদিন সরষের তেল সারা শরীরে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করলে দেহের প্রতিটি কোনায় রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেহের সচলতাও চোখে পরার মতো বেড়ে যায়। এবার বুঝেছেন তো বন্ধু, ছোট বাচ্চাদের কী কারণে তেল মালিশ করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা!

৪. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু একাধিক গবেষণায় একতা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত সরষের তেল খেলে হার্টের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৫. ওমেগা ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি মেটে: বিশ্ব সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে সরষের তেল ওমেগা ত্রি এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধি, যা জয়েন্ট পেন এবং ডিপ্রেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা নিমেষে কমে যায়: সরষের তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটারি উপাদান যে কোনও ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন কাজে আসে।

৭. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: সরষের তেলে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে।

৮. ভাজা-ভুজির জন্য আদর্শ: আমরা মানে বাঙালিরা যেহেতু বেশিরভাগ খাবারই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করে থাকি তাই আমাদের জন্য সরষের তেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আজকাল অনেকে বাঙালিই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু একথা জেনে রাখা ভাল যে রকমের খাবার আমরা খেয়ে থাকি তা বানাতে অলিভ অয়েল একেবারেই আদর্শ নয়। কারণ কম তাপমাত্রায় বানানো খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু যেসব খাবার বেশি আঁচে বানানো হয়, তাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে শরীরের ভাল হওয়ার থেকে খারাপ হয় বেশি।

৯. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সরষের তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি কোণায় যাতে ঠিক মতো রক্ত পৌঁছে যেতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে।

Random Post