যতই ঝাল লাগুক না কেন দিনে ৩-৪ টে লঙ্কা খাওয়া উচিত কেন জানেন?


গবেষণা অনুসারে আকারে ছোট হলেও মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে লঙ্কার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটির শরীরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে একাধিক রোগ দূরে পালাতে বাধ্য হয়। এই কারণেই চিকিৎসকেরা নিয়মিত ৩-৪ টে লঙ্কা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এখন প্রশ্ন হল শরীরকে চাঙ্গা রাখতে কী কী ভাবে সাহায্য করে এই সবজিটি?

১. যন্ত্রণা কমায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে লঙ্কা খাওয়া মাত্র সারা শরীর গরম হয়ে যায়। ফলে যে কোনও ধরনের ব্যথা কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, পেন রিলিফে লঙ্কার অন্দরে থাকা ক্যাপসিসিন ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. সংক্রমণের আশঙ্কা কমায়: লঙ্কা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, লঙ্কায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজও সংক্রমণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনে।

৩. শরীকে ঠান্ডা রাখে: লঙ্কায় উপস্থিত ক্যাপসিসিন নামে একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে অ্যাকটিভ করে দেয়। ফলে শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে গরম কালে যেভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তাতে শরীরকে ঠান্ডা রাখাটা যে কতটা জরুরি তা নিশ্চয় আর আর বলে দিতে হবে না।

৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে: আজকের যুগের ট্রেন্ডই হল "স্লিম অ্যান্ড ফিট" শরীর। আর তা পেতে কেউ জিম মুখি, তো কেউ হট যোগাসনে ব্যস্ত। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে প্রতিদিন ২-৩ টি করে কাঁচা লঙ্কা খেলেও এক্ষেত্রে দারুন উপকার মিলতে পারে। একেবারেই ঠিক শুনেছেন! একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা লঙ্কার অন্দরে ক্যালরি না থাকার কারণে এটি খেলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে না। সেই সঙ্গে এতে থাকা একাধিক উপকারি ভিটামিন এবং পুষ্টিকর উপাদান হজম ক্ষমতার মারাত্মক উন্নতি ঘটায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার কোনও সুযোগই থাকে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। তাই এবার থেকে শরীরচর্চার পাশাপাশি কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন নিমেষে মেদ কমে যাবে।

৫. সাইনাস ইনফেকশনের প্রকোপ কমায়: কাঁচা লঙ্কায় উপস্থিত ক্যাপসিসিন নামক উপাদান সাইনাস এবং নাকের মিউকাস মেমব্রেনকে স্টিমুলেট করে। সেই সঙ্গে মেমব্রেনের অন্দরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাইনাসে ইনফেকশনের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

৬. ক্যান্সার বিরোধী: পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এই রোগের প্রকোপ আগামী ২-৩ বছরে যে আরও বাড়বে, সে বিষয প্রায় নিশ্চিত চিকিৎসকেরা। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সাবধানতা না নিলে কিন্তু বেজায় বিপদ! তাহলে উপায়? এক্ষেত্রে কাঁচা লঙ্কা আপনাকে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে। আসলে লঙ্কায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের অন্দরে থাকা ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদানদের নষ্ট করে দিয়ে এমন মারণ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে নিয়মিত কাঁচা লঙ্কা খেলে প্রস্টেট সম্পর্কিত একাধিক রোগ থেকেও মুক্তি মেলে। তাই পুরুষদের কাছে অনুরোধ, বুড়ো বয়সে যদি আরামে কাটাতে চান, তাহলে এখন থেকেই লঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান। দেখবেন উপকার মিলবে।

৭. ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তে যাতে শর্করার মাত্রা কোনও ভাবেই বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখে এই সবজিটি। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৮. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্যে দিয়ে হার্টকে তরতাজা রাখতে লঙ্কার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এখানেই শেষ নয়, এই সবজিটির শরীরে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান ব্লাড ক্লট যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে।

৯. মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে: শুনতে যতই আজব লাগুক না কেন, বেশ কিছু গবেষণাতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে লঙ্কা খাওয়া মাত্র আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এন্ডোরফিন নামক "ফিল গুড" হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন আনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগে না। ফলে স্ট্রেস লেভেল তো কমেই, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদের প্রকোপও হ্রাস পায়।

১০. চোখ এবং ত্বকের উন্নতি ঘটায়: ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন প্রচুর মাত্রায় থাকায় প্রতিদিন লঙ্কা খেলে দৃষ্টিশক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে স্কিন এবং চুলের সৌন্দর্যও চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।

Random Post