ব্লাড প্রেসারের মতো রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে খেতেই হবে এই খাবারগুলি!


পশ্চিমি দেশগুলির পাশাপাশি এশিয়া মহাদেশেও গত কয়েক বছরে রক্তচাপ সংক্রান্ত রোগের প্রসার চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে। একদলের মতে এশিয়ানদের শারীরিক গঠনের কারণে নাকি তাদের জন্ম থেকেই নানাবিধ লাইফস্টাইল ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাকি উপমহাদেশের বাসিন্দাদের থেকে বেশি থাকে। তথ্যটি নির্ভুল। কিন্তু একথা মানতে একটু কষ্ট হয় যে শুধুমাত্র শারীরিক গঠনের কারণেই এমন একটা ভয়ঙ্কর রোগের বাড়বাড়ন্ত হতে পারে না। এক্ষেত্রে নিশ্চয় আরও কিছু কারণ দায়ি।

একেবারে ঠিক! শারীরিক গঠন তো আছেই সেই সঙ্গে মদ্যপান, ধূমপান সহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই কারণেই তো এই রোগের চিকিৎসায় প্রথমে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে ওষুধ খেতেও বলেন। এই নিয়মগুলি মানলে কাজ হয় ঠিকই। কিন্তু একবার প্রেসারের ওষুধ খাওয়া শুরু করলে সারা জীবন সেই ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। তাই তো এই প্রবন্ধে এমন কিছু খাবারের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হল, যা নিয়মিত খেলে রক্তচাপ একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই আপনিও যদি এই রোগের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে এই ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে একবার কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। উপকার যে মিলবে, তা বলাই বাহুল্য।

এক্ষেত্রে যে যে খাবরগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...
 
১. ওটস:

উচ্চ এবং নিম্ন, দুই ধরনের রক্তচাপকে স্বাভাবিক করতে এই খাবারটির কোনও বিরল্প হয় না বললেই চলে। এখানেই শেষ নয়, হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও ওটস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
২. আদা:

এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানাভাবে সাহায্য করে। তাই তো যাদের এমন সমস্যা রয়েছে, তারা দিনে ১-২ বার আদা চা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
 
৩. বিটের রস:

ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত বিটের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই সবজি খাওয়া মাত্র রক্তে নাইট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ব্লাড প্রেসার কমতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে এন্ডোথেলিয়াল ইনফ্লেমেশনও কমে।
 
৪. কলা:

পরিবারে কি উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে বন্ধু রোজের ডায়েটে কলার অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে ভুলবেন না যেন! কারণ কলা খাওয়া মাত্র দৈনিক পটাশিয়ামের চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ১ শতাংশ ক্যালসিয়াম এবং ৮ শতাংশ ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদাও পূরণ হয়। ফলে দেহের অন্দরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে কমে রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও।
 
৫. দই:

শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসতে একেবারেই সময় লাগে না। ঠিক এই কারণেই তো ব্লাড প্রেসারে ভুগতে থাকা রোগীদের নিয়মিত দই খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ দই খাওয়া মাত্র দিনের চাহিদার প্রায় ৪৯ শতাংশ ক্যালসিয়ামের চাহিদা মিটে যায়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে সময়ই লাগে না।
 
৬. টমাটো:

এই সবজিটিতে রয়েছে লাইকোপেন নামে একটি উপাদান, যা শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশপাশি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৭. তুলসি:

তুলসি পাতায় রয়েছে ইউজেনল নামে একটি উপাদান, যা অল্প দিনেই ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
 
৮. মূলা:

শুধু মূলা নয়, পাতা সমেত এই সবজিটি খেলে তবেই ব্লাড প্রেসার একেবারে হাতের মুঠোয় চলে আসে। আসলে মূলায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা শরীরে নুনের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্যে দিয়ে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
 
৯. ডার্ক চকোলেট:

এতে রয়েছে কোকো, যা রক্ত চাপ কমানোর পাশপাশি নানাবিধ হার্টের রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমায়। তাই যারা অল্প বয়স থেকেই নানা ধরনের লাইফ স্টাইল ডিজিজে আক্রান্ত, তারা এই খাবারটি খাওয়ার অভ্যাস করুন। উপকার পাবেন।
 
১০. বেদানা:

এতে উপস্থিত পলিফেনোলিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, শিরা-উপশিরাকে প্রসারিত করে। ফলে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায়। আর এমনটা হলেই স্বাভাবিক হতে শুরু করে রক্তচাপ।
 
১১. সজনে:

এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম। কী কাজে আসে এই খনিজটি? এটি শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক লেভেল নিসে। তাই তো প্রেসারের রোগীদের নিয়মিত সজনে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
 
১২. তিল:

তিল তেল বিশেষ কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। সেই সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন-ই। এই সবকটি উপাদানই রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজে আসে।
 
১৩. রসুন:

অপনি কি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকেই রসুন খাওয়া শুরু করুন। কারণ এটি দ্রুত রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন নামে একটি উপাদান ব্লাড প্রসার স্বাভাবিক করতে নানাভাবে সাহায্য করে।
 
১৪. গাজর:

এই সবজিটিতে উপস্থিত পটাশিয়াম, দেহের অন্দরে ফ্লইড ব্যালেন্স ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যাদের রক্তচাপ প্রায়শই ওঠা-নামা করে, তাদের নিয়মিত গাজর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, কাঁচা গাজর খেতে যদি ভাল না লাগে, তাহলে গাজরের রস বানিয়েও খেতে পারেন। এমনটা করলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।

Random Post