নিয়মিত কলা খাওয়া কি উচিত নয়?


কলা খাওয়া মানেই পটাশিয়ামের এন্ট্রি ঘটা শরীরে। আর দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। আর এমনটা হলে আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই প্রতিদিন এই ফলটি খেলে শরীরের যে কোনও ক্ষতিই হয় না, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবেমার গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় উঠে এসেছে এক আজব তথ্য। তারা জানাচ্ছেন প্রতিদিন কলার মতো আরও সব পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল খেলে আর্টারির কর্মক্ষমতা নাকি মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আর হার্ট যদি একবার ঠিক মতো কাজ করা শুরু করে দেয়, তাহলে শরীর নিয়ে কোনও চিন্তাই থাকে না। প্রসঙ্গত, শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে হার্টে রক্ত সরবরাহকারি শিরা-ধমনিগুলি স্টিফ হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার সরাসরি প্রভাব পরে হার্টের উপর। সেই কারণেই তো হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কলা যে শুধু হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতেই কাজে লাগে, এমন নয়। রোজের ডায়েটে কলাকে জায়গা করে দিলে মেলে আরও অনেক উপকারিতা। যেমন...

১. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়: কলা খাওয়ার পর যদি কলার খোসা মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একাদিক যেমন ত্বকের রোগের প্রকোপ কমে, তেমনি স্কিনের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। আসলে কলার খোসার অন্দরে থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কলার খোসায় থাকা উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিডও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. পুষ্টির ঘাটতি দূর করে: শরীরের সচলতা বজায় রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন পরে শরীরের। আর এইসব উপাদানের যোগান শরীর পায় খাবারের মাধ্যমে। সমস্যাটা হল আজকের প্রজন্ম এতটাই ব্যস্ত যে তাদের হাতে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করার সময় নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার কারণে নানাবিধ রোগ এসে বাসা বাঁধে শরীরে। এমন পরিস্থিতি কলা কিন্তু দারুন কাজে আসতে পারে। কিভাবে? এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এবং মিনারেল। সেই সঙ্গে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলেটের মতো উপাদান, যা শরীরকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে ঠিক সময় খাবার খাওয়া সুযোগ না পেলে ২-৪ টে কলা খেয়ে নিতে ভুলবেন না যেন!

৩. ওজন কমায়: কলার শরীরে পটাশিয়াম ছাড়াও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর কম খেলে যে ওজনও কমে, সে কথা কার না আজানা বলুন! প্রসঙ্গত, ফাইবার কনস্টিপেশনের মতো রোগ সারাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরে নুনের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে নিয়মিত কলা খেলে দেহে নুনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।

৫. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে কলার অন্দরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। তাই পুজোর পর থেকে যদি পেটটা ঠিক না যায়, তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত কলা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

৬. রক্তাল্পতা দূর করে: কলায় রয়েছে বিপুল পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা এমন রোগে ভুগছেন, তারা আয়রন ট্য়াবলেটের পাশাপাশি যদি নিয়ম করে কলা খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মিলতে পারে।

৭. এনার্জির ঘাটতি দূর করে: বছরের শেষেও অফিসে এমন কাজের চাপ যে ক্লান্তি ঘরির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে বাড়তে মাত্রা ছাড়িয়েছে? ফিকার নয়! এমন পরিস্থিতিতে একটা কলা খেয়ে নেবেন সব সময়। তাহলেই দেখবেন অনেক চাঙ্গা লাগবে। কারণ ক্লান্তি দূর করতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই কারণেই তো অ্যাথেলিটদের রোজের ডেয়েটে আর কিছু থাকুক না থাকুক কলা থাকেই!

৮. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: ইউনিভার্সিটি অব লিডসের গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে কলার মতো ফাইবার সমৃদ্ধ ফল প্রতিদিন খাওয়া শুরু করলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে করনারি ডার্ট ডিজিজও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই পরিবারে যদি হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে নিয়মিত কলা খেতে ভুলবেন না যেন!

Random Post