এই ৭টি কারণ প্রতিদিন তিল বীজ খাওয়া জরুরি...!

খেয়াল করে দেখবেন যাদেরই আমরা অবজ্ঞার চোখে দেখি, তারাই এক সময়ে গিয়ে সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে সারা বিশ্ব শাসন করে। না হলে কি আমরা কখনও মহম্মদ আলি বা জ্যাক মার মতো মানুষদের পেতাম? না, হয়তো পেতাম না। কারণ এঁদের অবজ্ঞা করা হয়েছিল বলেই না তাদের মনে এমন আগুন জ্বলেছিল যে সারা দুনিয়াকে মুঠোর মধ্যে বন্দি করে ফেলার স্বপ্ন দেখেছিল।

হঠাৎ করে কেন এঁদের কথা বলছি তাই ভাবছেন তো? আসলে আজ এই প্রবন্ধে এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদানের সম্পর্কে আলোচনা করবো, যাকে সবাই অবজ্ঞার চোখে দেখলেও শরীরকে সুস্থ রাখতে এই উপাদানটি যা করে থাকে, তা বাস্তবিকই অবাক করার মতো!

কার কথা বলছি, তা নিশ্চয় এতক্ষণইে বুঝে গেছেন? একেবারে ঠিক ধরেছেন! এত শব্দ খরচ করা হয়েছে তিলের বীজের সম্পর্কে বলার জন্যই! একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদান, যা ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিন যদি অল্প করে তীল বীজ খেতে পারেন, তাহলেও মেলে আরও সব শারীরিক উপকার। যেমন ধরুন...
 
১. রক্তচাপকে স্বাভাবিক থাকে:

একথা তো জেনে ফলেছেন যে তিল বীজ রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এই কাজটা তিল বীজ কীভাবে করে থাকে, সে বিষয়ে জানা আছে কি? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তিলের বীজ থেকে তৈরি হওয়া তেল শরীরে প্রবেশ করার পর সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ব্লাড ভেসেলের উপর তৈরি হওয়া চাপ কমাতে শুরু করে। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে একেবারেই সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, তিল বীজের অন্দরে থাকা বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদানও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
২. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে:

ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি তিল বীজে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইটেট নামক একটি উপাদান, যা দেহের অন্দরে যাতে কোনওভাবে ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। সেই সঙ্গে রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়েও এই মারণ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, শরীরে যত টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তত দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই কোনও ভাবেই এই বিষের পরিমাণ না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
 
৩. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:

পরিবারে কি এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে তো বন্ধু রোজের ডায়েটে তিলের বীজকে রাখতেই হবে। কারণ এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে কমাতে শুরু করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যেসব ওষুধ খেয়ে থাকে সেগুলির খারাপ প্রভাব যাতে শরীরের উপর না পরে, সেদিকেও খেয়াল রাখে তিলের বীজের অন্দরে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান।
 
৪. হাড়কে শক্তপোক্ত করে:

তিল বীজের অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। এই তিনটি উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে দাঁতের খেয়াল রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, তীলের বীজ থেকে তৈরি হওয়া তেল দাঁতে লাগালে একদিকে যেমন ক্যাভিটির আশঙ্কা কমে, তেমনি মুখ গহ্বরে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াও মারা পরে।
 
৫. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:

প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে পাচক রসের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে একেবারেই সময় লাগে না। তবে ফাইবার যে কেবল মাত্র হজমের উন্নতি ঘটায়, এমন নয়। এই উপাদান কনস্টিপেশন মতো সমস্যা কমানোর পাশাপাশি যে কোনও ধরনের পেটের রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৬.এনার্জির ঘাটতি দূর করে:

তিলের বীজে রয়েছে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। সেই সঙ্গে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টিকর উপাদান, যা নানাভাবে এনার্জির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
৭. আর্থ্রাইটিসের কষ্ট কমায়:

ইনফ্লেমেশন কমানোর মধ্যে দিয়ে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে তিল বীজের অন্দরে থাকা কপার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই খনিজটি প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে।

Random Post