গোলমরিচে অরুচি নেই তো? থাকলে কিন্তু বিপদ...!

খাস বাঙালি খাবারে এর জায়গা নেই ঠিকই, কিন্তু অমলেট অথবা টোস্ট, নয়তো স্যালাডের দিকে ঝুঁকলে গোলমরিচের সন্ধান ঠিক পাবেই পাবেন! আর এইটাই দুঃখের বিষয়।

দুঃখ কিসে জানেন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ভিটামনি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন এবং আরও নানা ধরনের উপকারি উপাদানে টাসা এই প্রকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে শরীরের দারুন সব উপকার হয়। তবু বাঙালি খাদ্যরসিক কুল গোলমরিচকে শুধু আটকে রেখেছেন পশ্চিমী খাবারের চৌহদ্দিতেই। কিন্তু দয়া করে আপনি এই ভুল কাজটি করতে যাবেন না যেন! কারণ পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাবার এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনের কারণে নানা জটিল রোগ যখন আমাদের বাড়ির দোরগোড়ার এসে দাঁড়িয়েছে, তখন গোলমরিচে নাক সিঁটকলে কিন্তু বিপদ!

এত দূর পড়ার পর নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে নিয়মিত গোলমরিচ খাওয়া শুরু করলে কী কী উপকার মিলতে পারে, তাই তো? তাহলে আর অপেক্ষা কেন, চলুন খোঁজ লাগানো যাক সে সম্পর্কে...

১. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে গোলমরিচ খাওয়া মাত্র মস্তিষ্কের অন্দরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে নিউরো ট্রান্সমিটারের কর্মক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। আর ব্রেন পাওয়ার বাড়তে শুরু করলে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি এবং মনযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে চোখে পরার মতো। তবে এখানেই শেষ নয়, গোলমরিচে উপস্থিত পিপেরিন নামক উপাদানটি পার্কিনসনের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
গোলমরিচে উপস্থিত নানাবিধ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে ওরাল ইনফেকশন, গাম ইনফ্লেমেশন এবং ক্যাভিটির মতো সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না। ফলে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে চোখে পরার মতো!

৩. ব্লাড প্রেসার কন্ট্রলে থাকে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিচ গোলমরিচ খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে পিপেরিন নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরের যাওয়ার সুয়োগই পায় না। তাই তো বলি বন্ধু, যাদের পরিবারে এই রোগটির ইতিহাস রয়েছে, তারা যদি রোজের ডেয়েটে এই প্রকৃতিক উপাদনটিকে জায়গা করে দেন, তাহলে বাল্ড প্রেসারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
পিপেরাইন যে শুধু ক্যান্সার সেলকেই ধ্বংস করে না, সেই সঙ্গে হজম সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। আর একবার এইসব অ্যাসিডগুলি যদি ঠিক মতো কাজ করা শুরু করে দেয়, তাহলে হজমের সমস্যা তো হয়ই না, সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের মতো অস্বস্তিও কমতে শুরু করে।

৫. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে:
গোলমরিচে রয়েছে পিপেরিন নামে একটি উপাদান, যা ক্যান্সার সেলকে এনকাউন্টারে মারতে দারুনভাবে সক্ষম। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই মশলাটির শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিন এবং আরও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ক্যান্সার রোগকে যেমন দূরে রাখে, তেমনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে সংক্রমণ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৬. সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
গোলমরিচের অন্দরে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে পোকামাকড় কামড়ানোর পর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানা সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

৭. মন-মেজাজ চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
বিজ্ঞানিরা এমনটা মনে করে থাকেন যে গোলমরিচে উপস্থিতে পিপেরাইন মস্তিষ্কের অন্দরে "ফিল গুড" হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিমেষে মন খারাপ ছুমান্তর হয়ে যায়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

৮. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
অল্প পরিমাণ গোলমরিচের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু, দই মিশিয়ে যদি প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে ত্বকের উপর বয়সের ছাপ পরে না। সেই সঙ্গে বলিরেখাও অদৃশ্য হতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো পেস্ট মুখে লাগালেও দারুন উপকার পাওযা যায়। একাধিক কেস স্টাডি অনুসারে এই পেস্টটি ত্বকের উপরিঅংশে জমে থাকা মৃত কোষের আবরণ সরিয়ে দেয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।

৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে:
শুনতে একটু অজাব লাগলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা একথা প্রমাণ করেছে যে ওজন কমাতে বাস্তবিকই গোলমিরচ দারুনবাবে সাহায্য করে। আসলে গোলমরিচের মধ্যে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা ফ্যাট সেলকে গলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মেটাবলিজম রেটের বৃদ্ধি ঘটায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার সুযোগ না পাওয়ার কারণে ওজন কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে কোনও খবারে এক চিমটে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলেই ফল মিলবে, বেশি মাত্রায় খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

১০. ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে:
শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা কমানোর পাশাপাশি সাইনুসাইটিস এবং নেজাল কনজেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, রেসপিরেটরি ইনফেকশনের প্রকোপ কমাতেও গোলমরিচের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই বায়ু দূষণের মাঝে ফুসফুসকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত গোলমরিচ খেতে ভুলবেন না যেন!

১১.জ্বরের প্রকোপ কমায়:
কারণে-অকারণে সারা বছর ধরেই কি জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগে থাকেন? তাহলে তো আজ থেকেই যখন সুযোগ পাবেন, খাবারে গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে এই মশলাটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা জ্বরের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক চামচ মধুর সঙ্গে অল্প পরিমাণে গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। এমনটা করলে একদিকে যেমন জ্বর কমবে, তেমনি বুকে কফ জমে থাকলে, তাও কমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ভাইরাল ইনফেকশনও আর ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পাবে না।

Random Post